নাশকতা প্রতিরোধে কাউন্সিলরের নেতৃত্বে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি

নাশকতা প্রতিরোধ ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে নগরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে স্থানীয় কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

রোববার (২৮ জুলাই) অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বর্তমান পর্ষদের ৪২৩তম সাধারণ সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন।

লালদিঘি পাড় চসিকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় নগরের পাহাড় কাটা রোধ এবং ডোবা, দিঘি রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেন মেয়র। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসন, ব্যাটারি রিকশা, ডেঙ্গু প্রতিরোধ, হকার উচ্ছেদসহ নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেও বক্তব্য রাখেন।

নাশকতা রোধে কমিটি: নাশকতা প্রতিরোধে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়ে মেয়র বলেন, কমিটিতে এলাকার মসজিদগুলোর ইমাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানসহ এলাকার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষকে সদস্য করে প্রতি মাসে সভা করতে হবে।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে। তবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে আমাদেরও কিছু নৈতিক দায়িত্ব আছে। জনগণের জান–মাল রক্ষায় কাউন্সিলররা প্রতিটি ওয়ার্ডে নাশকতা প্রতিরোধে অরাজনৈতিক কমিটি গঠন করুন। কমিটিতে এলাকার মসজিদগুলোর ইমাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানসহ এলাকার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শ্রেণী–পেশার মানুষদের সদস্য করে প্রতি মাসে সভা করে এলাকার মানুষদের মাঝে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালান। নাশকতামূলক যে কোনো কার্যক্রমকে তৃণমূলেই রুখে দিন।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি কোটাবিরোধী আন্দোলনের আড়ালে দেশি–বিদেশি কিছু অপশক্তি মিলে দেশকে অকার্যকর করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যার সাহসী ভূমিকার কারণে এই অপচেষ্টা প্রতিহত করা গেছে। আমি ১৯৬৬ সাল থেকে রাজনীতি করছি। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান করেছি, মুক্তিযুদ্ধ করেছি, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করেছি। আমার অভিজ্ঞতার আলোকে এবারের যে কার্যক্রম তাকে কোনোভাবেই আন্দোলন বলতে পারি না। এটা ছিল রাষ্ট্র ধ্বংসের আন্দোলন। না হলে, সেতু ভবন, মেট্রোরেল স্টেশন, হানিফ ফ্লাইওভার, বিটিভি, পুলিশ বঙ এগুলো কী দোষ করেছে? এগুলো কেন ধ্বংস করা হলো? আন্দোলনের নামে টোকাই, ভাড়া করা লোক, বেকার যুবকদের দিয়ে দেশজুড়ে নাশকতা চালানো হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর নিয়ে ক্ষোভ: সভায় পাহাড় কাটা রোধ এবং ডোবা, দিঘি রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেয়র। এ সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধি এ বিষয়ে ১৯৪টি মামলা করার কথা জানান মেয়রকে। তখন মেয়র বলেন, পাহাড়খেকো, পুকুরখেকোদের বিরুদ্ধে আপনারা ১৯৪টা মামলা করেছেন বলছেন। কিন্তু মামলা করে কোনো লাভ নেই। আপনার মামলার রায় আসতে আসতে বহুতল ভবন হয়ে যায়। আসকার দিঘি, ভেলুয়ার দিঘিসহ চট্টগ্রামের বহু জলাশয় দখল হয়ে যাচ্ছে। আপনারা উচ্ছেদ অভিযান চালান, মামলা–জরিমানা করে লাভ নেই। আপনারা পরবর্তী সভায় প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন। আপনাদের কার্যক্রমের অগ্রগতির বিস্তারিত জানাবেন।

এ সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি সিনিয়র কেমিস্ট রুবাইয়াত তাহরীম সৌরভ পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটের অভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না বলে জানান। তখন মেয়র প্রয়োজনে করপোরেশন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নেওয়ার পরামর্শ দেন।

হকার উচ্ছেদ: অবৈধ হকারদের উচ্ছেদে আবারো অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়ে মেয়র বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতায় হকারদের ভূমিকা কী তা চট্টগ্রামবাসী দেখেছে। সহিংসতা নিয়ে প্রশাসনের ব্যস্ততার সুযোগে নিউ মার্কেট মোড়ে আবারও হকাররা রাস্তা দখল করে বসেছে। আমি আবারও নিউ মার্কেট মোড়ে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে জনগণকে জনগণের সড়ক ফিরিয়ে দেব।

তিনি বলেন, ট্রাফিক বিভাগের সাথে বসে ব্যাটারি রিকশা বন্ধে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। মাদকের বিস্তার রোধে প্রয়োজনে পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দেব। যানজট নিরসনে আগ্রাবাদে পে–পার্কিং চালু করেছি। পার্কিং বাড়াতে আরো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সিএমপির এসি (কোতোয়ালী) অতনু চক্রবর্তী বলেন, জনগণের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিতে অবৈধ হকার উচ্ছেদ ও উচ্ছেদের পর উদ্ধারকৃত স্থান মনিটরিং করার জন্য ১৬টি থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গাড়ির গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের জন্য ৪৬টি স্থানে সাইনবোর্ড নির্মাণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অবৈধ ব্যাটারি রিকশা আটক করে ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নাশকতা মোকাবিলায় গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত আছে।

মেয়র বলেন, আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের মাধ্যমে শহরকে সাজাচ্ছি। স্বাধীনতার পর থেকে কোনো পরিষদ এত বাজেট আনতে পারেনি। প্রধান প্রকৌশলী আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ওয়ার্ডভিত্তিক কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরবেন। আমি কোনোভাবে নিম্নমানের কাজ মেনে নেব না। আলোকায়নের যে প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে তা বাস্তবায়নে চুয়েটকে দায়িত্ব দেওয়া হবে পোল থেকে লাইট সবকিছুর মান যাচাইয়ের বিষয়ে। আমি টেকসই উন্নয়ন চাই।

এ সময় মেয়র নগরের যে সমস্ত সড়কের নামকরণ করা হয়নি এবং নতুন যেসব সড়ক নির্মাণ করা হবে সেগুলোকে চট্টগ্রামের বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণের ঘোষণা দেন। তিনি প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সবগুলো স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সুচিকিৎসা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিতে বলেন।

মেয়র কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যক্রমের গতি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন কার্যক্রমের গতি বাড়াতে হবে। কাউন্সিলররা বিষয়টি তদারকি করবেন। লোক সংকট থাকলে তাও জানাবেন। তবে লোক আছে ৫০ জন, কাজ করবে ৩০ জন, বাকিরা কাজ না করে বেতন খাবে তা হবে না। যারা কাজ না করে বেতন নিচ্ছে তাদের তালিকা করে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গ: সভায় উপস্থিত সিডিএর প্রতিনিধির উদ্দেশে মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএর প্রকল্প সেনাবাহিনী বাস্তবায়ন করছে। তবে কাজের বিষয়ে আপনাদেরই জবাবদিহি করতে হবে। সুতরাং প্রকল্প দ্রুত শেষ করার বিষয়ে কাজ করুন।

তিনি বলেন, বহদ্দারহাটে চাঁন মিয়া রোডে মানুষ হাঁটতে পারছে না। এলাকাবাসী দলবদ্ধভাবে আমার কাছে এসে জানিয়েছে, রাস্তার অনেক জায়গায় খালের মতো গর্ত। তারা তো সিডিএ চেনে না। মনে করে এ কাজের দায়িত্বও আমার। আপনারা কাউন্সিলরদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করুন।

এসআই/আজকের বেলা
Comments (০)
Add Comment