দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে একের পর এক মরে ভেসে উঠছে মা মাছ ও ডলফিন। এবার ফের ভেসে উঠল মরা কাতলা মাছ। স্থানীয়রা বলছেন, মাছটির গায়ে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন।
এদিকে গত এক সপ্তাহে হালদায় ৫টি মরা রুই-কাতলা মা মাছ ভেসে উঠেছে। মিলেছে একটি মৃত ডলফিনও। সবমিলিয়ে হালদা নদীর এমন অবস্থায় শঙ্কিত বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতির উন্নতিতে তাঁরা দিয়েছেন বেশকিছু পরামর্শ। আবার স্থানীয়রা জোর দিয়েছেন বন্ধ থাকা অভিযান দ্রুত শুরু করতে।
রোববার (৩০ জুন) সকাল ১১টায় হালদা নদীর রাউজান অংশের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকা থেকে মরা কাতলা মাছটি উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন। মাছটির ওজন ১৯ কেজি ৩০০ গ্রাম এবং দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৮ সেন্টিমিটার।
স্থানীয় বাসিন্দা রোশাঙ্গীর আলম বলেন, নদীর দক্ষিণ দিক থেকে জোয়ারে ভেসে আসে কাতলা মাছটি। ভাটার কারণে সকাল ১১টার দিকে এটি আজিমের ঘাট এলাকায় আটকা পড়ে। মাছটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে অসাধু মাছ শিকারি এবং নদীর পানি দূষিত হওয়ার কারণেই মা মাছের মৃত্যু হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এভাবে মা মাছ ও ডলফিন মারা গেলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। এ অবস্থায় হালদার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নজরদারি বাড়ানো জরুরি বলে মতামত বিশেষজ্ঞদের।
হালদাপাড়ের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, হালদা নদীর পানিতে কলকারখানা, ডেইরি, পোলট্রি ফার্ম ও গৃহস্থালীর বর্জ্য পড়ে দূষণে পানি কালো হয়ে গেছে। একসময় হালদায় প্রতিমাসে কমপক্ষে দু-তিনটি অভিযান চালানো হতো। কিন্তু বর্তমানে আর চোখে পড়ছে না। হালদায় অবৈধভাবে বড়শি ও জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হলেও গত দুমাসেও কোনো অভিযান চালানো হয়নি।
এ বিষয়ে রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগজ্যাই মারমা বলেন, নদীতে কাতলা মাছ মারা যাওয়ার বিষয়টি পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফোন করে জানান। পরে মরা কাতলা মাছটি উপজেলায় নিয়ে আসেন। মাছটি হয় দু-তিনদিন আগে মারা গেছে। মাথা থেকে পচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে । পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান মাছটি হালদা পাড়ে মাটিতে পুঁতে ফেলেন।
তিনি বলেন, রাউজান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে মরা কাতলা মাছটি পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিতে বলেছি। রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যোগাযোগ করা হলে রাউজান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, হালদায় একটি কাতলা মা মাছ মারা গেছে। যার ওজন ১৯ কেজি ৩০০ গ্রাম ও দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৮ সেন্টিমিটার। কী কারণে মাছটির মৃত্যু হয়েছে পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
এদিকে হালদায় একের পর এক মা মাছ মরে ভেসে উঠার ঘটনায় শঙ্কিত বিশেষজ্ঞরাও। এমন পরিস্থিতিতে থেকে বেরিয়ে আসতে তারা দিয়েছেন বেশকিছু পরামর্শও।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দূষণ, অবৈধ জাল, বড়শি ও বিষ দিয়ে মাছ ধরার কারণে হালদা নদীর স্বাস্থ্যব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। যেসব শাখাখালের মাধ্যমে হালদায় কলকারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সেসব কারখানা চিহ্নিত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।