বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের জেরে গতবছর নগরের লালখানবাজারে বাবুর্চি নিহার রিছিলের হাতে খুন হন একই প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক এসএম মঈন উদ্দিন তন্ময়। সেই হত্যা মামলার আসামি নিহার রিছিলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও ৩ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর জেলা ও দায়রা জজ ড. জেবুন্নেছার আদালত এ রায় দেন।
এ বিষয়ে মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার পৌর এলাকার বড়বাজার পাড়ার এসএম কামাল উদ্দীনের ছেলে তন্ময় হত্যা প্রমাণিত হওয়ায় শেরপুর জেলার নলিতা থানার মায়াখাসী গ্রামের খরিপ সাংমার ছেলে নিহার রিছিলকে (৫১) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৩ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আসামির উপস্থিতিতে রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানামূলে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, নগরের খুলশী থানার লালখানবাজার এলাকার চাঁনমারি রোডের হাইপিরিয়ন ভবনের তৃতীয় তলার একটি বাসা ভাড়া নিয়ে ছয় কর্মকর্তার থাকার ব্যবস্থা করেছিল তিলোত্তমা টাইলস কোম্পানি। নিহার রিছিল ওই প্রতিষ্ঠানের নিযুক্ত বাবুর্চি। একই বাসায় একসঙ্গে থাকতেন তিনি।
২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি বিকেলে মঈন উদ্দিনকে ছুরিকাঘাত করেন নিহার রিছিল। ওইসময় চিৎকার শুনে ভবনের লোকজন ঘরে গিয়ে তন্ময়কে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এসময় নিহার হাতে ছুরির বাট নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় নিহার জানান, তন্ময়কে ছুরিকাঘাত করার পর ছুরি পেটের ভেতর রয়ে গেছে। পরে হাসপাতালের কর্ত্যবরত চিকিৎসকরা তন্ময়কে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহত মঈন উদ্দিনের ছোট ভাই এসএম আমিন উদ্দিন বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন।
তৎকালীন খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দণ্ডিত আসামির বরাত দিয়ে জানান, বছরখানেক আগে নিহারের সঙ্গে তার স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। সেই ঘটনা নিয়ে নিহারকে বিদ্রুপ করত তন্ময়। সম্প্রতি বান্দরবানের এক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীর সঙ্গে নিহারের সম্পর্ক হয়। সেটা নিয়েও তন্ময় তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। নিহারের বয়স, বিয়ে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অশ্লীল কথা বলত তন্ময়। এছাড়া রান্না ভালো না হওয়া নিয়েও বিভিন্ন সময় বকাঝকা করতো তন্ময়। তাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য খুনের পরিকল্পনা করে নিহার।
এদিকে ২০২২ সালের ২৯ জুন আদালতে মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। ৯ নভেম্বর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক। এতে ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ।