মিরসরাইয়ে নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার—অন্তরালে ভারতীয় চিনি-মাদকের চোরাই কারবার

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের ফেনী নদীর আমলীঘাটের মেরকুম এলাকায় রোববার (২৩ জুন) রাতে প্রায় দুই শতাধিক লোক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশে আনছে ভারতীয় চোরাই চিনি ও মাদক। হঠাৎ বিপত্তি ঘটে সীমান্তের নো ম্যানস্ ল্যান্ড অঞ্চলে। এ সময় ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) উপস্থিতি টের পেয়ে বাংলাদেশিদের সবাই পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশে প্রবেশ করতে পারেনি কিশোর জাহেদুল ইসলাম (১৭)।

শ্রবণ প্রতিবন্ধী জাহেদুল করেরহাট ইউনিয়নের পূর্ব অলিনগর গ্রামের মো. ফারুক ইসলামের ছেলে। মঙ্গলবার (২৫ জুন) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে তার মরদেহ ভেসে উঠে নদীতে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জাহেদ ফেরত আসতে নৌকায় উঠতে চাইলে বিএসএফ’র সদস্যরা তার মুখে ভারী অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে সে নদীতে পড়ে যায়। এরপর সে নিখোঁজ হয়। পরদিন সোমবার (২৪ জুন) বারইয়ারহাট ফায়ার সার্ভিস ও চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের তিন সদস্যের ডুবরী দল টানা ৮ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে তার খোঁজ পায়নি। পরদিন মঙ্গলবার (২৫ জুন) ভোর সাড়ে ৬টা নাগাদ সারারাত পাহারায় থাকা পরিবারের লোকজন নিখোঁজ জাহেদুরের মরদেহ নদীতে ভাসতে দেখে স্থানীয়রা জোরারগঞ্জ থানায় অবহিত করলে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে।

নিহত জাহেদুল ইসলামের চাচা নজরুল ইসলাম দাবি করেন, এলাকার কিছু চিনি চোরা কারবারী টাকার প্রলোভন দেখিয়ে আমার ভাতিজা জাহেদুলসহ আরো অনেক কিশোরকে চিনির বস্তা বহনে ব্যবহার করতো। ওই রাতেও করেরহাট ইউনিয়নের বদ্ধভবানী এলাকার মফিজুল তাকে সীমান্তের ওপারে (ভারত) নিয়ে যায়। পরে বিএসএফ আসলে সবাই পালিয়ে গেলেও আমার ভাতিজা ফেরত আসেনি।

এ বিষয়ে চিনি চোরা কারবারী সিন্ডিকেটের সদস্য মফিজুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের বেলাকে বলেন, ওই রাতে আমার কোনো কাজ ছিল না। করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম অলিনগর গ্রামের জামাল মাঝি ও তার ভাই রাইফুল জাহেদুলকে এ কাজে নিয়ে যায়। আমিও মাঝে মাঝে এগুলো করতাম, এখন আর করি না।

পরবর্তীতে জামাল মাঝির কাছে জানতে চাইলে তিনি আজকের বেলাকে বলেন, আমি হলাম মাঝি, আমার কাজ হলো লোকজন সরবরাহ করা। আমি মফিজুলকে লোকবল সরবরাহ করি।

এ সময় জামাল মাঝির কাছে চিনি চোরা কারবারীদের তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে বড় কোনো মাথা নেই। এলাকার প্রায় ৩০ জনের মতো লোক ভারত থেকে সীমান্ত পার করে চিনি নিয়ে আসেন। স্থানীয়রা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সবাই এই কাজে জড়িত।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আজকের বেলাকে বলেন, করেরহাট ইউনিয়নের আমলীঘাট মেরকুম সীমান্ত দিয়ে প্রতি রাতে হাজার বস্তারও ওপর চিনি চোরাই পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আবার চিনির বস্তার ভেতর অনেক সময় ভারতীয় মদ এবং ফেনসিডিলও আনা হয়। এ কাজে এলাকার উঠতি বয়সি ছেলেদের প্রতি বস্তায় ২০০ টাকা দেওয়া হয়। এতে প্রত্যেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫০০  থেকে ২ হাজার টাকার বেশি রোজগার করে। তবে এ কাজে এলাকার কারা যুক্ত ও মূল হোতা কে জানতে চাওয়া হলে স্থানীয়রা তাদের নাম বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল হারুন আজকের বেলাকে বলেন, জাহেদুলের মরদেহ উদ্ধারের পর সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। তার শরিরে বড় ধরণের কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে দীর্ঘসময় নদীর পানিতে ডুবে থাকার দরুন মুখের একটি অংশে আঘাতের মতো সামান্য কিছু ক্ষত দেখা যাচ্ছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডকেল (চমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে আসা পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অলিনগর বিওপি কমান্ডের নায়েব সুবেদার খোরশেদ আলম আজকের বেলাকে বলেন, আমরা এসব বিষয়ে কিছুই জানি না। সোমবার সকালে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আসার পর জানলাম একটি ছেলে নদীতে নিখোঁজ হয়েছে।

এসএস/এসআই
আজকের বেলাকরেরহাটপুলিশমিরসরাইমৃত্যু
Comments (০)
Add Comment