কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে নাশকতায় অর্থ জোগানদাতা ৬০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশ। এছাড়া নগরজুড়ে চলা তাণ্ডবে বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত বিভিন্ন উপজেলা থেকে কর্মীদের ভাড়া করে আনা হয়। তবে তদন্তের স্বার্থে এসব প্রতিষ্ঠান বা কারও নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।
জানা যায়, জামালখানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর, আন্দরকিল্লা-কাজীর দেউড়ি-নিউমার্কেট এলাকায় পুলিশ বক্স ও থানায় হামলা, লালদীঘি মাঠে গায়েবানা জানাজার পর বিভিন্ন স্থানে হামলা-ভাঙচুর, পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙচুর এবং সরকারি-বেসরকারি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ সহ নগরে তাণ্ডবে নেতৃত্ব দেয় একাধিক বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী।
তারা ছাদ থেকে ফেলে দেয় ছাত্রলীগের ১০ কর্মীকে। এছাড়া সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই উপজেলা এবং কক্সবাজারের মহেশখালী, পেকুয়া ও চকরিয়া থেকে ভাড়া করে আনা হয় লোকজন।
ছবি ও ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এসব তাণ্ডবের নেতৃত্বে দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ ও বর্তমান সেক্রেটারি তানজীর হোসেন জুয়েলসহ একাধিক নেতা-কর্মীকে।
বহদ্দারহাটে সহিংসতার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন শিবির ক্যাডার মো. সরওয়ার। আন্দরকিল্লা মসজিদ মার্কেটের সামনে লাঠিসোটা হাতে দলবল নিয়ে অবস্থানে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সাংস্কৃতিক শাখার চট্টগ্রাম মহানগরের সেক্রেটারি ইসমাইল চৌধুরী।
জুবিলি রোড এলাকায় সড়কে আগুন জ্বালিয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. তরিকুর রহমান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মহসিন কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মো. আব্দুল আলী রাব্বী। এ অবস্থায় গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী।
এদিকে চলমান অভিযানকে ‘গণগ্রেপ্তার’ মন্তব্য করে তা বন্ধের দাবি জানিয়েছে মহানগর বিএনপি। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান এক বিবৃতিতে দাবি করেন, গত ১৫ দিনে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ২০টি মামলায় ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগরে নাশকতা প্রতিরোধে কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দেন সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
কমিটিতে এলাকার মসজিদগুলোর ইমাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সদস্য করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত ও উসকানিদাতাদের চিহ্নিত করে তালিকা তৈরির কথাও বলেন তিনি।
পুলিশ বলছে, সিসিটিভি, বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হচ্ছে। তাণ্ডবে জড়িত একাধিকজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলাসহ সহিংসতার ঘটনায় জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পিআর) কাজী মো. তারেক আজিজ জানান, চট্টগ্রামে ৩৪ মামলায় এখন পর্যন্ত ৯৮৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উপ-কমিশনার (উত্তর) মোখলেসুর রহমান বলেন, এসব ঘটনা তদন্ত করে দেখা গেছে- পরিকল্পিতভাবেই নাশকতা করা হয়েছে। নগর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে লোকজন আনা হয়। যারা দীর্ঘদিন ধরে সরকার পতনের সঙ্গে জড়িত ছিল, তারাই চট্টগ্রামে সহিংসতা করেছে। তারা ছাত্রদের প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে এই কাজ করেছে। এসব ঘটনার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে সিএমপির একাধিক ইউনিট কাজ করছে।
সিএমপি কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামে নাশকতায় অর্থ জোগানদাতা প্রতিষ্ঠান এবং নেপথ্যে থাকা কিছু ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে। এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।