চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সোমবার (২১ অক্টোবর) ভোর ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্বশত্রুতার জের ধরে ভোর ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলগেট এলাকায় আপ্যায়ন নামের এক রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর চালান যুবলীগ নেতা গাছ হানিফের অনুসারীরা। এ সময় তারা কয়েক রাউন্ড গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। একপর্যায়ে তারা রেলগেটে অবস্থা নেন। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রেলগেট এলাকায় যান। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা যুবলীগের ওই নেতার একটি দোকান ভাঙচুর করেন। তখন যুবলীগের নেতাকর্মীরা কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। এসময় শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে পালিয়ে যান তারা।
পরে যুবলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়েছে উল্লেখ করে গুজব রটিয়ে দেন। এতে করে শিক্ষার্থীরা রেলগেটে অবস্থান শেষ করে ফিরে আসার সময় পেছন থেকে হামলা করেন স্থানীয়রা। এসময় একজন ছাত্র আহত হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুল্লাহ খালেদ বলেন, ক্যাম্পাসে যুবলীগের সন্ত্রাসীরা বোমাবাজি করছে শুনে সকালেই আমরা জিরো পয়েন্টে আসি। পুলিশের জন্য অপেক্ষা করলেও রেলগেটে সন্ত্রাসীরা অবস্থান নেওয়ায় তারা আসতে পারছে না বলে শোনা যায়। পরে আমরা শিক্ষার্থীরা প্রক্টর সহকারে রেলগেট এলাকায় যাই এবং অবস্থান নেই। এ সময় যুবলীগের ক্যাডাররা আমাদের দিকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পরে আমরা ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ইসহাক বলেন, পুলিশ আমাদের ন্যূনতম সহযোগিতা করেনি। এত বিশাল ঘটনা, অথচ ওসি পুলিশ পাঠিয়েছেন তিনজন। ওই তিনজন আবার সন্ত্রাসীদের কারণে রেলগেট থেকে আসতে পারছিলেন না। আমাদের কাছে খবর আছে যে, হাটহাজারী থানার বর্তমান ওসি যুবলীগ নেতা হানিফের কাছ থেকে টাকা নেন। আর হানিফ ক্যাম্পাসের আশপাশে লাখ লাখ টাকার অবৈধ ব্যবসা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানভীর হায়দার আরিফ বলেন, স্থানীয় একজনের দোকানে সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর চালালে ঘটনার সূত্রপাত হয়। রাত ৪টায় এখানে প্রচুর ককটেল ফোটানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। সন্ত্রাসীরা গুজব রটিয়ে দেয় এলাকাবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সকালে আমরাসহ শিক্ষার্থীরা রেলগেট এলাকায় যাই। সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হয়েছে। দুপুর ২টায় একটি মিটিং হবে, যেখানে এলাকার গণ্যমান্য তিন ব্যক্তি, ছাত্র প্রতিনিধি ও আমরা প্রক্টরিয়াল বডি থাকবো। মিটিং থেকে একটি সমন্বয় কমিটি করা হবে যাতে ভবিষ্যতে এমন সমস্যা হলে দ্রুত সমাধান করা যায়।
যুবলীগ নেতা হানিফের বিষয়ে প্রক্টর বলেন, এই সন্ত্রাসীর নামে একাধিক মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে তারা সন্ত্রাসীকে (হানিফ) খুঁজছে। কিন্তু পাচ্ছে না। অন্যদিকে এলাকাবাসীর মতে তিনি রাতে নিয়মিত এলাকায় আসেন।
অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে রেলওয়ের জায়গা দখল করে সবগুলো দোকানের ভাড়া নেন হানিফ। এছাড়া তার ছোট ভাই ছাত্রলীগ নেতা মো. ইকবাল পুরো ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় ডিসলাইন এবং ওয়াইফাইয়ের ব্যবসা করেন।
এর আগে ৫ আগস্ট রাতে রেলক্রসিং এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান যুবলীগ নেতা হানিফ ও তার অনুসারীরা। তাদের হামলায় তখন তিনজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন।