চট্টগ্রাম-৪: দলীয় প্রার্থী হওয়ার আশায় মাঠে যারা

নির্বাচনি হালচাল

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকেরা ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন। বিশেষ করে সরকারি দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন।

বিএনপি ও অন্য দু-একটি রাজনৈতিক দলের এখনো নির্বাচন ঘিরে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা না গেলেও প্রতিটি আসনেই দলগুলোর প্রার্থীর ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে। থেমে নেই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতা।

আজকের বেলার নির্বাচনি হালচালে আজ থাকছে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিস্তারিত…

আসন পরিচিতি
চট্টগ্রাম-৪ সংসদীয় আসনটি সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯নং উত্তর পাহাড়তলী ও ১০নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২৮১তম আসন।

যারা মনোনয়ন চাইবেন
সীতাকুণ্ড আসনে দু’দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দিদারুল আলম। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দলটির অধিকাংশ নেতাকর্মী তাকে চিনতেন বিএনপি ঘরানার শিল্পপতি হিসেবে। বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম মনজুর আলম তার চাচা। ২০১৮ সালে অনায়াসে মনোনয়ন পেলেও এবার হিসেব সহজ নয় বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

সম্প্রতি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন এস এম আল মামুন, যিনি সীতাকুণ্ডের আগের তিনবারের সাংসদ আবুল কাশেম মাস্টারের ছেলে। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতিও ছিলেন তিনি। রোববার (১৯ নভেম্বর) তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। একইদিন সাংসদ দিদারুল আলমও মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।

এছাড়াও মনোনয়ন চাওয়াদের তালিকায় রয়েছেন— সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া, সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরী, শিল্পপতি পারভেজ উদ্দীন চৌধুরী সান্টু।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে হরতাল-অবরোধ পালন করছে বিএনপি। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনেকে কারাগারে আটক রয়েছেন। আটক আছেন এই আসনে বিএনপির একক প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। একাধিক মামলায় তার দুই বছরের বেশি সাজাও হয়েছে। সেই হিসাবে আসলাম চৌধুরী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারবেন না। এমনকি বিদেশে অবস্থানরত তার স্ত্রীসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কারণ তারা ইতোমধ্যে ঋন খেলাপীর দায়ে দুই বছরেরও বেশি সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন।

আসলাম চৌধুরীর বিকল্প কাউকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। তবে ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াত ইসলামীর সীতাকুণ্ড দক্ষিণের আমির আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরী জোটের মনোনয়ন চাইবেন।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব দিদারুল কবির দিদার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী ছিলেন। তবে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্বাচন কেন্দ্রীক।

প্রার্থীরা কী বলছেন…
জানতে চাইলে দিদারুল আলম আজকের বেলাকে বলেন, আমি দু’বার এমপি, ১০ বছর ধরে এলাকার মানুষের সেবা করছি। মনোনয়ন অনেকে চাইতে পারেন। গতবার ১৭ জন চেয়েছিলেন। এবার হয়তো আরও বেশি চাইবেন। কিন্তু দল আমার কর্মকাণ্ডের সঠিক মূল্যায়ন করলে আমিই মনোনয়ন পাব। সেক্ষেত্রে দলের সবাই আমার পক্ষেই থাকবেন, এ নিয়ে কোনো দলাদলির সুযোগ নেই।

এস এম আল মামুন বলেন, গত দু’বার যিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হলেও আমাদের দলের লোক ছিলেন না। তিনি কখনো ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ করেননি। মূলত তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন। একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি এমপি হওয়ায় আমাদের নেতাকর্মীরা যেমন কোণঠাসা হয়ে আছেন, তেমনি প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের বিশাল কর্মযজ্ঞ থেকেও আমরা পিছিয়ে পড়েছি। সেই বাস্তবতায় পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় আমি মনোনয়ন ফরম নিয়েছি। আশা করি, দল নেতাকর্মীদের আশার মূল্যায়ন করবে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে আছি। আশা করি, তিনি আমাকে মনোনয়ন দেবেন। দল থেকে মনোনয়ন পেলে আমি বিপুল ভোটে নৌকাকে বিজয়ী করতে পারবো বলে আশা রাখি।

শিল্পপতি পারভেজ উদ্দীন চৌধুরী সান্টু বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মনোনয়ন চাইবো। মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে জিতবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই শিল্পপতি।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২ শত ২৮ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৭ হাজার ৮ শত ১৫ জন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দিদারুল আলম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৬৬ হাজার ১ শত ১৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ইসহাক চৌধুরী। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৩০ হাজার ১৪ ভোট। আর কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

দুদিনে মনোনয়ন ফরম যারা নিলেন
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বর্তমান সাংসদ দিদারুল আলম, এস এম আল মামুন, চৌধুরী মোহাম্মদ জিন্নাত আলী ও রত্নেন্দু ভট্টাচার্য মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগআজকের বেলাচট্টগাম-৪নির্বাচনমনোনয়নসীতাকুণ্ড
Comments (০)
Add Comment