জাতীয় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে বিএনপিসহ বিভিন্ন পক্ষের তৎপরতার প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন হতে দেবে না বলে তো অনেক হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছিল। এখন সেসব হুমকি-ধমকি গেলো কোথায়?
বাংলাদেশে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে যারা বড় খেলা খেলতে চেয়েছে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছে, নির্বাচন হতে দেবে না। মুরব্বিদের (বিদেশি) পরামর্শে চললে বাংলাদেশের আর চলা লাগবে না। যদি সৎ পরামর্শ হয়, সেটা ভালো কথা।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি এবার নির্বাচন হতেই দেবে না, এটাই তাদের লক্ষ্য ছিল। তাদের কিছু মুরুব্বি (বিদেশি) আছে, তারাও একই পরামর্শ দিয়েছে। বলা হয়েছিল, এমন অবস্থা সৃষ্টি করবে যেন নির্বাচন না হয়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে তারা চেনে নাই। একাত্তরের ৭ মার্চ জাতির পিতা তার ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন- ‘কেউ দাবায় রাখতে পারবা না’। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে এদেশের মানুষ সেটা আবারও প্রমাণ করেছে। এখন কোথায় গেল তাদের হুমকি-ধমকি?
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে গণভবনে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নির্বাচন-পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ’৭৫-এর পর থেকে বাংলাদেশে যত নির্বাচন আমরা দেখেছি, তার মধ্যে সবচেয়ে সুশৃঙ্খল ছিল গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচন। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দেশের জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মুষ্টিমেয় খুনি এবং যুদ্ধাপরাধীদের দলের লোক ছাড়া দেশের সব মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু এবং প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। এত এত দলের মধ্যে দু-চারটা দল অংশগ্রহণ না করলে কিছু আসে যায় না। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটে অংশগ্রহণ করেছেন, সেটাই সবচেয়ে বড় বিষয়। ১২০ বছর বয়সী বুড়ো মানুষটিও ভোট দিতে গিয়েছেন। এরচেয়ে বড় কথা আর কী হতে পারে?
নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, অত্যন্ত কঠোরভাবে শৃঙ্খলা রক্ষা করে তারা নির্বাচন অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। সুশৃঙ্খল নির্বাচন অনুষ্ঠান করার জন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, প্রশাসন এবং নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন। এ ধরনের চমৎকার নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য সবাইকে অভিনন্দন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ নির্বাচন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি আমি জানি তাদের নেতাকর্মীরা এখন হতাশায় ভুগছেন। তাদের বলবো হতাশার কিছু নেই, আপনারা তো এদেশেরই জনগণ। হয়তো আপনাদের ওপর ওহি নাযিল হয়েছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, ডিজিটালের সুবাদেই ওহি নাযিল হয়। নিজে (তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে) লন্ডনে বসে আয়েশ করে পায়েস খায়, আর এখানে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াতে কর্মীদের মাঠে নামায়।
শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫-এর পর নির্বাচন মানে কী আমি সেটা দেখেছি। নির্বাচন মানেই ছিল- ভোট চুরি, ভোট ডাকাতি আর ভোটার তালিকায় মিথ্যা নাম দেওয়া। সংবিধান লঙ্ঘন করে, সেনা আইন লংঘন করে যারা ক্ষমতায় ছিল, তাদের পকেট থেকে রাজনৈতিক দল বের হতো। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেই দল না। আওয়ামী লীগ হচ্ছে মানুষের অধিকারের কথা বলার দল। যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না তখনই আওয়ামী লীগের সৃষ্টি। জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে, জনগণের অধিকার রক্ষায় আওয়ামী লীগের সৃষ্টি। সৃষ্টিলগ্ন থেকে আওয়ামী লীগ জনগণের স্বার্থে কাজ করে গেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল। শত চেষ্টা করেও ভোটার আনতে পারেনি। তারপর নিজেরা ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরে ছিল। সারাদেশে আর্মি নামিয়েছিল, পুলিশ নামিয়েছিল, সব নামিয়েছিল। তারপরও সে নির্বাচন হয়নি এবং জনগণ মেনে নেয়নি। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হয়েছিল, ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া ভোটচুরির অপরাধ নিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। নিশ্চয়ই সেই কথাটা জনগণ ভুলে যায়নি।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালেও তারা এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছিল। সেই নির্বাচনও ভোটচুরির দায়ে টিকাতে পারেনি। ইমারজেন্সি ডিক্লেয়ার হয়, খালেদা জিয়াও যায়, তার নির্বাচনও যায়। এদের তাও শিক্ষা হয় না, লজ্জা হয় না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য বারবার অনেকেই এসেছে। আইয়ুব খান চেষ্টা করেছে, ইয়াহিয়া খান চেষ্টা করেছে। এরপর জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছে, এরশাদ চেষ্টা করেছে। জিয়াউর রহমান যেভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, একইভাবে খালেদা জিয়াও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মেরেছে। শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নয়, এদেশের প্রতিটি শ্রেণির মানুষ আজকে তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত। ২০১৩-১৪ থেকে তারা আগুন সন্ত্রাস করছে। একটা মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব থাকলে কোনদিন এভাবে অন্য মানুষকে পুড়িয়ে মারতে পারে না।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ভেবেছিল একেবারে ক্ষমতায় চলে যাবে। অথচ তারা সেই নির্বাচনে মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছে। এরপর থেকে তারা জেনে গেছে, বাংলাদেশের মানুষ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও হত্যার রাজনীতি পছন্দ করে না। সেই থেকে দেশের মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল। যে কারণে পরবর্তী সময়ে তারা কোনো নির্বাচনে আসতে চায়নি।