বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের যৌথ প্রস্তাব সরকার আমলে নিয়েছে। এটিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং চক্রান্ত হিসেবে দেখছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সরকারপ্রধানের জাতিসংঘ ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়া নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের যৌথ প্রস্তাব আমলে নেওয়ার ব্যাখ্যা দেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, একদিক থেকে এটাকে আমলে নেব, কারণ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত। এ রকম কোনো কার্যক্রম হলে আমরা চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে থাকতে পারি না। সেই আগ্রহটুকু থেকে, সেই হস্তক্ষেপ থেকে; আমলে অবশ্যই নেব।
একই ইস্যুতে অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আমলে না নেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা যে আলোচনা করেছেন, এটার লজিস্টিক কোনো অথরিটি নাই। ইট ইজ নট অ্যা মেন্ডাটরি।
গতকাল (বুধবার) ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক যৌথ প্রস্তাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ জানানো হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা, বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করাসহ বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে।
‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশেষ করে অধিকারের মামলা’ শীর্ষক প্রস্তাবের ওপর স্ত্রাসবুর্গের স্থানীয় সময় আজ (বৃহস্পতিবার) ভোটাভুটি হওয়ার কথা।
শাহরিয়ার আলম বলেন, আটজন বক্তব্য দিয়েছেন। তার মধ্যে দু’জনের কথা পরিস্কারভাবে এসেছিল, যে তারা এটার পক্ষে নয়। একজন এ রকমও বলেছেন, এ ধরনের আচরণ ইউরোপীয় পার্লামেন্ট থেকে নতুন কলোনিউনিজমে উসকে দিতে পারে এবং উন্নয়শীল দেশগুলোর ওপর এ রকম আচরণ ঠিক নয়। আরেকজন বক্তা বলেছেন, এ ধরনের উদ্যোগ ইউরোপীয় পার্লামেন্ট থেকে নিলে এটা ব্যাকফায়ার করতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওনাদের একাধিক বক্তা যে লাইনে বলেছেন, আশা করি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অন্য এমপিরা এ বিষয়ে সামনে উদ্ধুদ্ধ হবেন না। আমরা যেটা মনে করি, ইইউর সঙ্গে আমাদের একটা পরিপক্ক সম্পর্ক রয়েছে। সেই পরিপক্ক সম্পর্কের জায়গা থেকে আমাদের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে আশা করি ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট হস্তক্ষেপ করবে না।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের যৌথ প্রস্তাবে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার এবং সংগঠনটির নিবন্ধন পুনরায় চালু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গ শাহরিয়ার আলম বলেন, অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমানকে নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট হস্তক্ষেপ করবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি। কেননা, বিষয়টা আদালতে বিচারাধীন। এ ধরনের কার্যক্রমে ইউরোপীয় কাউন্সিল আমলে নেবেন না।
‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশেষ করে অধিকারের মামলা’ শীর্ষক প্রস্তাবের ওপর যে ভোটাভুটি হবে- তাতে সরকারের নজর থাকবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
অন্যদিকে ড. মোমেন বলেন, ওনারা ৭৫৩ জন সদস্য রয়েছেন, তারা অনেকে অনেক বক্তব্য দিতে পারেন। এটা তাদের বিষয়। তবে এটা দুঃখজনক। ওরা অনেক সময় কারও কারও প্ররোচণায় বক্তব্য দেন। কেউ ইনিশেয়েটিভ নেয় ওনাদের বক্তব্য দেওয়ার জন্য। তারা তাদের বক্তব্য দিক।
বিদেশিরা কথা বললে দেশের গণমাধ্যম মজা পায় বলে অভিযোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে আগামী গণমাধ্যম বিদেশিদের বাদ দিয়ে দেশের দিকে মনযোগী হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।
মোমেন বলেন, তারা কথা বললে আপনারা বড় মজা পান। আপনারা যদি তাদের প্রত্যাখান করতেন তারা বক্তব্য দিতো না। অন্য দেশে প্রত্যাখান করে। ভারতের বিরুদ্ধে কিছু বললে, প্রত্যাখান করে। কিন্তু আপনারা এটাকে খুব গুরুত্ব দেন। বিদেশি কেউ বললে, আপনারা লাফিয়ে ওঠেন। আগামীতে আপনারা দেশের দিকে মনযোগ দেবেন, বিদেশের দিকে মনযোগ কম দেবেন।