যুক্তরাজ্যের সাপ্তাহিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বরাবরের মতো এ বছরও প্রকাশ করেছে বর্ষসেরা দেশের তালিকা। এবারের তালিকায় শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্ষসেরা দেশের তালিকা প্রণয়নে বিত্ত, সুখ কিংবা নৈতিকতার মতো বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। বরং ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪-এ, অর্থাৎ গত ১২ মাসে যেসব দেশ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, তাদের ভিত্তিতেই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
ইকোনমিস্টের ২০২৪ সালের বর্ষসেরা দেশের চূড়ান্ত তালিকায় রয়েছে পাঁচটি দেশ। এর মধ্যে শীর্ষ স্থান দখল করেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিরিয়া, আর তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে যথাক্রমে আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পোল্যান্ড।
বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমাদের এবারের বিজয়ী দেশ বাংলাদেশ, যারা এক স্বৈরশাসকের শাসন অবসান করেছে। গত আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। শেখ হাসিনা ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের ১৭ কোটিরও বেশি মানুষের ওপর শাসন করছিলেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা হিসেবে তিনি একসময় অর্থনৈতিক উন্নয়নের নেতৃত্ব দিলেও পরবর্তীতে দমন-পীড়ন চালানো, নির্বাচন কারচুপি, বিরোধীদের গ্রেফতার এবং আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংস দমননীতির জন্য সমালোচিত হন। তার শাসনামলে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনাও ব্যাপকভাবে ঘটে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের সময় সাধারণত সহিংসতা ঘটে। তবে এবার পরিস্থিতি বেশ শান্তিপূর্ণ। বর্তমানে শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে, যা ছাত্র, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সমর্থন পেয়েছে। এই সরকার ইতোমধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে সক্ষম হয়েছে।
তবে ইকোনমিস্ট সতর্ক করেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সামনের পথ সহজ হবে না। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং ২০২৫ সালে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন এই সরকারের সবচেয়ে বড় দুটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এই সরকারকে অবশ্যই দেশের বিচারব্যবস্থা স্বচ্ছ করতে হবে এবং বিরোধী দলগুলোকে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। কাজগুলো সহজ হবে না। তবে একজন স্বৈরশাসককে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং আরও উদার ও গণতান্ত্রিক পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ এ বছর আমাদের তালিকার সেরা দেশ।’
তালিকায় সিরিয়ার দ্বিতীয় স্থান পাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সাম্প্রতিক ক্ষমতাচ্যুতি। অন্যদিকে, অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য আর্জেন্টিনা, এবং দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকদের বিরুদ্ধে গিয়ে নতুন সরকার গঠনের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা ও পোল্যান্ডও তালিকায় স্থান পেয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের সেরা দেশ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল গ্রীস, যারা দীর্ঘ অর্থনৈতিক সংকট থেকে পুনরুদ্ধার করতে এবং সংযত মধ্যপন্থী সরকার পুনর্নির্বাচিত করতে সক্ষম হয়। আগের বছরগুলোতে সেরা দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছিল কলম্বিয়া (গৃহযুদ্ধ অবসানের জন্য), ইউক্রেন (রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিরোধের জন্য), এবং মালাউই (গণতন্ত্রায়নের জন্য)।