দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কি-না, তা স্পষ্ট না করলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, তারা যদি দায়িত্ব পালন করে তাহলে একটা ইতিবাচক দিক থাকবে।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে অংশগ্রহণকালে সিইসি এ কথা বলেন। এদিন সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমশের মবিন চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে।
ওই বৈঠকে তৃণমূল বিএনপি সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব করে। জবাবে সিইসি জানান, সংলাপের সময় রাজনৈতিক দলগুলোও সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব করেছিল।
তিনি বলেন, ‘সংলাপেও প্রায় প্রতিটি দলই আর্মির কথা বলেছে। আমরাও লক্ষ করেছি—সেনাবাহিনীর উপস্থিতিটা একান্তভাবে কাম্য। জনগণ আর্মির ওপর আস্থা রাখতে চায়। তারা যদি দায়িত্ব পালন করেন—তাহলে একটা ইতিবাচক দিক থাকবে। পেশিশক্তি বলে একটা শক্তি হয়েছে। দুঃখজনক হলেও এটা আমাদের দেশের বাস্তবতা। আমাদের প্রচুর কালো টাকা আছে। পুরো পকেটভর্তি কালো টাকা। কাজেই কালো টাকা ব্যবহার করতে হলে আমাদের পেশিশক্তিকে ক্রয় করতে হবে। পেশিশক্তিকে যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে জনগণের যে ভোটাধিকার, সেটা অবশ্যই ব্যাহত হতে পারে। আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণে আপ্রাণ চেষ্টা করবো। আপনাদেরও সাহসিকতার সঙ্গে চেষ্টা করতে হবে।’
সাংবিধানিকভাবে সরকার নির্বাচন কমিশনকে ভোটে সহায়তা করতে বাধ্য, দাবি করে সিইসি বলেন, ‘সরকারের যে সহায়তা, তার ওপর আমাদের ব্যাপকভাবে নির্ভর করতে হবে। আপনারা জানেন, সরকার ক্ষমতায় থাকবে। সেক্ষেত্রে অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন—সরকার আসলে নিরপেক্ষ হবে কিনা? সরকার সেই প্রতিশ্রুতি এবং সাংবিধানিকভাবে আমাদের সেই নিরপেক্ষ সহায়তা দিতে বাধ্য। আমরা সরকার বলতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন বুঝে থাকি। সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের মূল সরকার। আমাদের বৃহৎ পরিসরে জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করতে হবে।’
ভোট হচ্ছে একটা ‘গেম’ উল্লেখ করে তৃণমূল বিএনপিকে উদ্দেশ করে সিইসি আরও বলেন, ‘আপনি যদি ভালো না খেলেন, তাহলে কিন্তু জেতার প্রত্যাশা করা কঠিন। যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন অবশ্যই এজেন্ট দিতে হবে। আমি কিন্তু ওখানে বসে আপনার ঘর পাহারা দিতে পারবো না। ৪২ হাজার কেন্দ্র ও তিন লাখ বুথে একজন মানুষের পক্ষে কোটি কোটি… বিভাজিত হয়ে, যেটা ফেরেশতারা পারে, আমরা পারবো না। আমাদের সেই ঐশ্বরিক শক্তি না, মানবিক শক্তি নিয়ে যতটা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়, আমরা মনিটর করবো।’
যদি কোনও একটি বিশেষ দলের কারণে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা না যায়, সেক্ষেত্রে ইসি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চেষ্টা করবে বলে জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা থাকলেও আমাদেরও শক্তি ও সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা অবশ্যই থাকবে।’
ভোটের তথ্য গণমাধ্যমে প্রচারিত হোক—ইসি এমনটা চায় জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা চাই ভোটকেন্দ্রের তথ্য প্রচারিত হোক। ওরা (ভোটাররা/পর্যবেক্ষক/গণমাধ্যম) যদি ভোটকেন্দ্র থেকে ফিরে এসে বলে, অসম্ভব। ভোট বলে কিছুই নেই। সব ডাকাত। সারা দেশে প্রচারিত হোক। ভোটকেন্দ্রে কোনও ভোট হচ্ছে না। কেবলই ডাকাতি হচ্ছে। আবার যদি সুষ্ঠু ভোট হয়—সেটাও প্রচারিত হোক। আমরা মিডিয়ার কাছ থেকে ডিসইনফরমেশন চাই না। বস্তুনিষ্ঠ ইনফরমেশন চাই।’
তিনি বলেন, ‘মিডিয়াকে আমরা অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছি। তারা ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে পারবে। ছবি তুলতে পারবে, কেবল গোপন কক্ষে যেতে পারবে না। সেখানে গিয়ে যদি দেখে অনিয়ম হচ্ছে, তারা ছড়িয়ে দিক। পটাপট সিল মারছে, দেখানো হোক, আমরা চাই। আমরা আইনগত ও নৈতিকতার অবস্থান থেকে কথাগুলো বলছি।’