দেশে কারফিউয়ের আজ পঞ্চম দিন (২৫ জুলাই)। বুধবার (২৪ জুলাই) সকাল থেকে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। গতকাল সকাল থেকে কারফিউ শিথিল থাকায় অফিস-আদালত, ব্যাংক খুলেছে, সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের ভিড় দেখা গেছে।
এছাড়া গত মঙ্গলবার রাত থেকে সীমিতভাবে ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিথিল থাকবে কারফিউ। এদিকে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল ব্রিফ করেছেন মন্ত্রীরা। তারা জানিয়েছেন সবশেষ পরিস্থিতি।
‘সহিংসতাকারীদের টার্গেট ছিলো পুলিশ ও আ.লীগ’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সরকার সব দাবি মেনে নিয়েছে। এরপরও আন্দোলন চালিয়ে গেলে ক্ষয়ক্ষতির দায় আর আন্দোলনকারীরা এড়াতে পারবে না। কোটা সংস্কারের দাবিতে হওয়া আন্দোলন এখন ঘোষণা দিয়ে থামানো উচিত, বাকি দাবির জন্য অপেক্ষা করা উচিত।
বুধবার (২৪ জুলাই) মধ্যরাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার ধানমন্ডির বাসায় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানসহ প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সহিংসতাকারীদের মূল টার্গেট ছিলো পুলিশ আর আওয়ামী লীগ। কোটা আন্দোলনকারীদের সকল দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। আন্দোলন করার আর কোনো যুক্তি নেই। যারা এর পেছনে ছিলো, তারা ফল পাওয়ার জন্য আবারও কাজ করছে।
‘ধ্বংসযজ্ঞ দেখে কূটনীতিকরা স্তম্ভিত’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ঢাকার বিভিন্ন স্থানের ধ্বংসযজ্ঞ দেখে কূটনীতিকরা স্তম্ভিত হয়ে গেছেন। তারা এ ধরনের তাণ্ডবের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। বুধবার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মন্ত্রী এ কথা জানান।
এর আগে বিকেলে বিদেশি মিশনপ্রধান ও কূটনীতিকদেরকে নিয়ে সম্প্রতি দুষ্কৃতকারীদের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডবলীলায় ক্ষতিগ্রস্ত ও পুড়ে যাওয়া ঢাকার চারটি স্থাপনা পরিদর্শন করেন মন্ত্রী।
ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নিকটবর্তী থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, ফিলিস্তিনসহ রাশিয়া, চীন, জাপান, তুর্কী, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, ব্রুনাই, মিশর, আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, ইউএনডিএসএস, আইইউটি, আইএফডিসি’র প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের ৪৯ জন কূটনীতিক এ পরিদর্শনে অংশ নেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, আজকে আমরা ডিপ্লোমেটিক মিশনগুলোর বাংলাদেশে কর্মরত কূটনীতিকদের ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সেতু ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মিরপুর ১০ মেট্রোরেল স্টেশন ও বিটিভি ভবনের মতো জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের পরিকল্পনা ছিল তাদের আরও কয়েক জায়গায় নিয়ে যাওয়া, বিশেষ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, ডেটা সেন্টার। কিন্তু রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ও বৃষ্টির কারণে অনেক বেশি সময় লেগেছে। তবে তারা মিরপুরের মেট্রোরেলের ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছেন। সেখানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, এমনকি ফুটওভার ব্রিজও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেতু ভবনে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, সেখানে ১২ তলা পর্যন্ত আগুন দিয়েছে। সাততলা পর্যন্ত তারা উঠে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিটিভি হচ্ছে টেলিভিশনের আঁতুর ঘর। আজকে যারা টেলিভিশন চ্যানেলগুলো চালায় তাদের অনেকের হাতেখড়ি হয়েছে বিটিভিতে। এই অঞ্চলের এবং বাংলা ভাষার প্রথম টিভি চ্যানেল বিটিভি। ১৯৬৪ সালে এটি স্থাপিত হয়েছিল। ভারতে তখনও টেলিভিশন চ্যানেল হয়নি। সেখানে যেভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
সেতু ভবনেও একই অবস্থা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেলের পাশের গাড়িগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলো রাষ্ট্রের ওপর হামলা। এগুলো জনগণের সম্পত্তি। তাদের হামলা তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তান্ডবকেও হার মানিয়েছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কিন্তু আমাদের টেলিভিশন চ্যানেল জ্বালিয়ে দেয়নি, কিন্তু এরা জ্বালিয়ে দিয়েছে। হানাদার বাহিনী যেভাবে মানুষের ঘরবাড়ি পুড়িয়েছে এরাও একই কায়দায় মানুষের সম্পত্তি, রাষ্ট্রের সম্পত্তি পুড়িয়েছে।
ড. হাছান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে আমাদের মিশনের সামনে একটি বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে পাকিস্তানিরা যোগ দিয়েছিল। বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেটি আয়োজনের সাথে যুক্ত ছিল। একইভাবে আমাদের বিভিন্ন মিশনের সামনে যে বিক্ষোভ হয়েছে সেখানে বিএনপি-জামায়াত চক্র পাকিস্তান কমিউনিটির সহায়তা নিয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। সেই সহায়তা নিয়ে এসব জায়গায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে এবং গুজব ছড়াচ্ছে। আজকে কূটনীতিকরা যাওয়ার পর অনেকেই বলেছে ‘দিস ইজ শেইম, শেইম’। অনেকেই আমার কাছে তাদের অনুভূতি শেয়ার করেছে, সবাই বলেছে, ‘ইটস ইয়োর ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার, উই আর উইথ ইউ’।
মন্ত্রীর বক্তব্যে কূটনৈতিক অঙ্গনে এ সময়কালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকাও উঠে আসে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশি মিশনগুলোর কাছে নোট পাঠিয়েছিলাম যে এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এটি নিয়ে যেনো বিদেশি দূতাবাসগুলো বা কূটনীতিকরা গণমাধ্যমে কোনো বিবৃতি না পাঠায়। তারা সেটি মেনে চলেছে। আজকে তারা গণমাধ্যমে কথা বলতে চাননি। সেজন্য গণমাধ্যমকে সেখানে ডাকিনি।
এ সময় গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ দিয়ে ড. হাছান বলেন, অতীতে এ ধরনের কিছু ঘটলেই আমাদের কুটনীতিকদের উদ্বুদ্ধ করা হতো কথা বলার জন্য। এবার আপনারা (গণমাধ্যম) সেটি করেননি, সেজন্য আপনাদেরও ধন্যবাদ জানাই।
‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে’
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষের পর বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা এই মুহূর্তে বিবেচনা করতে পারছি না।
‘সহিংসতায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে’
কোটা আন্দোলনকে ঘিরে যারা সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল তাদের প্রত্যেককে শাস্তির আওতায় আনতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বুধবার (২৪ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর রামপুরায় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) ঢাকা কেন্দ্র ও সদর দপ্তর ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় দুর্বৃত্তদের সাম্প্রতিক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন শেষে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।