সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করেছেন— এমন মন্তব্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের।
সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে নিজ অফিসকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, তার এ পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি-না, এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি যদি তার বক্তব্যে অটল থাকেন, তাহলে বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হতে পারে।
দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপকালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাকে বলেন, তিনি শুনেছেন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তবে তার কাছে এর কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই।
কথোপকথনটি রোববার পত্রিকাটির রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’—এ প্রকাশিত হয়। এরপর নতুন করে আলোচনায় আসে হাসিনার পদত্যাগপত্রের বিষয়টি।
সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি বহুবার পদত্যাগপত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেছি, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। হয়ত তার সময় হয়নি। ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে বঙ্গভবনে ফোন আসে, যেখানে বলা হয়েছিল যে প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আসবেন। এরপরই বঙ্গভবনে প্রস্তুতি শুরু হয়। কিন্তু এক ঘণ্টার মধ্যে আরেকটি ফোন আসে যে তিনি (শেখ হাসিনা) আসছেন না।’
তিনি বলেন, ‘চারদিকে অস্থিরতার খবর। কী হতে যাচ্ছে জানি না। আমি তো গুজবের ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে পারি না। তাই সামরিক সচিব জেনারেল আদিলকে বললাম খোঁজ নিতে। তার কাছেও কোনো খবর নেই। আমরা অপেক্ষা করছি। টেলিভিশনের স্ক্রলও দেখছি। কোথাও কোনো খবর নেই।
একপর্যায়ে শুনলাম, তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আমাকে কিছুই বলে গেলেন না। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার যখন বঙ্গভবনে এলেন তখন জানার চেষ্টা করেছি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন কি-না? একই জবাব। শুনেছি, তিনি পদত্যাগ করেছেন। মনে হয় তিনি সময় পাননি জানানোর।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সব কিছু যখন নিয়ন্ত্রণে এলো তখন একদিন মন্ত্রিপরিষদসচিব এলেন পদত্যাগপত্রের কপি সংগ্রহ করতে। তাকে বললাম, আমিও খুঁজছি। এ বিষয়ে আর বিতর্কের সুযোগ নেই। শেখ হাসিনা চলে গেছেন এবং এটাই সত্য। তবু এই প্রশ্নটি যাতে আর কখনো না ওঠে, তা নিশ্চিত করতে আমি সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়েছি।’
গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটে। এরপর তিনি ভারতে পালিয়ে যান। এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করার খবর জানান।
এরপর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনও জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।