নির্বাচনে কারা আসবে, সে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচনে কারা আসবে বা আসবে না, নির্বাচনের জন্য কারা যোগ্য বা যোগ্য নয়, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সিদ্ধান্ত নেবে। এটি আমাদের বিষয় নয়। আমাদের কাজ হলো নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কারের ব্যাপারে প্রস্তাব দেওয়া।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন আয়োজিত মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ইভিএমের আর প্রশ্নই আসে না, ওটা হবে না। নির্বাচন কমিশনও বলেছে, আমরাও একই মত দিয়েছি।

মানুষের মধ্যে আগ্রহ–উচ্ছ্বাস দেখা গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ আমাদের দেখে দুটো কথা বলতে চায়, আকুতি ব্যক্ত করতে চায়। তাদের সবারই আকুতি, একটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। যার মাধ্যমে গণতন্ত্র একটা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবে। এটা জন–আকাঙ্ক্ষা এবং আমাদেরও একই আকাঙ্ক্ষা। আমরা সততা এবং নিষ্ঠার সাথে কাজ করছি। মানুষের কাছ থেকে যা শুনেছি এবং আমাদের জ্ঞান–বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে কিছু প্রস্তাব দেব। কিন্তু বাস্তবায়ন আমাদের দায়িত্ব নয়। আমরা আশা করছি রাজনৈতিক দল, সরকার এবং নির্বাচন কমিশন এগুলো বাস্তবায়ন করবে।

সভায় বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন এবং মতামত ব্যক্ত করেছেন। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, জেসমিন টুলী, ড. মো. আব্দুল আলীম ও ছাত্র প্রতিনিধি সাদিক আরমান।

এতে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) শারমিন জাহান, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ, কঙবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্‌উদ্দিন, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ, রাঙামাটি পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসফিকুজ্জামান আফতাব, পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান, উপ–পরিচালক (স্থানীয় সরকার, চট্টগ্রাম জেলা) নোমান হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ) এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক, জেলা কমান্ড্যান্ট (আনসার ও ভিডিপি) মো. আবু সোলায়মান ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুস আলী।

‘প্রস্তাব দেওয়ার কাজ সংস্কার কমিশনের, বাস্তবায়ন করবে সরকার’ উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা আশা করছি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে পেশ করতে পারব। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমাদের কাজের সাথে নির্বাচন কমিশনের কাজের কোনো সাংঘর্ষিক বিষয় নেই। আমরা চাই, বর্তমান নির্বাচন কমিশন জাতিকে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেবে।

তিনি বলেন, সভায় নানা শ্রেণির মানুষ বক্তব্য রেখেছেন। সাধারণ মানুষ আর ব্যবহৃত হতে চান না। তারা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চাইছেন। প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও বক্তব্য রেখেছেন। উনারাও ব্যবহৃত হতে চান না। তারাও সুষ্ঠু নির্বাচন চান। সেভাবেই তারা দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বলেন, প্রার্থীদের হলফনামায় অনেক রকম ভুয়া, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেওয়া হয়। তথ্য গোপন করা হয়। এগুলো যাতে যাচাই–বাছাই করা হয়, সে সংক্রান্ত প্রস্তাব দেওয়ার কথা বিবেচনা করছি। আমাদের প্রস্তাবগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নির্বাচন কমিশনে যারা আছেন তারা সঠিক ব্যক্তি, এটি আমরা বিশ্বাস করতে চাই। আমাদের আশা, তারা একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারবেন।

তিনি বলেন, সংখ্যানুপাতিক আসনের পক্ষে–বিপক্ষে প্রস্তাব রয়েছে। দু পক্ষের বক্তব্যকেই আমরা বিবেচনায় নিচ্ছি। তবে কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোর জন্য সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। এটির জন্য আবার আলাদা কমিশন রয়েছে। এ কমিশনকে এ বিষয়ে সুপারিশ করতে হবে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রত্যেকেই অবাধ, সুষ্ঠু, নির্বাচন দেখতে চান। আবার যেন আগের মতো নির্বাচন না হয়। আবার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এই যে অপরাধের যেসব ঘটনা ঘটেছে, হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং একই সঙ্গে আমাদের নির্বাচনি ব্যবস্থাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে, এটার যেন অবসান হয়। রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও দায়িত্বশীল সুপারিশ এসেছে। তারাও চায় যে, একটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে যদি স্বাধীনভাবে নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে একটি চমৎকার, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব। নির্বাচন ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা গেলে প্রশাসন সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবে। আমরা আশা করছি, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাবে।

এসআই/আজকের বেলা
আজকের বেলাইসিচট্টগ্রামনির্বাচনসরকার
Comments (০)
Add Comment