এমভি জাহান মণি জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভিড়তেই হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান সেখানে থাকা ২৩ নাবিক। তিনটি টাগবোটের সহায়তায় মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেল ৪টার দিকে জাহাজটি এনসিটি-১ জেটিতে ভেড়ানো হয়।
এরপর জেটির সঙ্গে যুক্ত করা হয় ভ্রাম্যমাণ সিঁড়ি। সোয়া ৪টার দিকে জাহাজ থেকে একে একে নামতে থাকেন নাবিকরা। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তাদের অপেক্ষায় থাকা স্বজনরা। নিরাপদে স্বদেশে স্বজনদের কাছে ফিরত পেরে নাবিকদের চোখে ছিল পানি, আর মুখে হাসি। এ হাসি যেন যুদ্ধজয়ের।
এ সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল, কেএসআরএমের পরিচালক, সিইও এবং বন্দরের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বেলা ১২টার দিকে নতুন নাবিকদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর শেষে এমভি জাহান মণি জাহাজে কুতুবদিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দর জেটির উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে কুতুবদিয়ায় বঙ্গোপসাগরে নোঙর করে এমভি আবদুল্লাহ। একইদিন এমভি জাহান মণি নতুন ২৩ নাবিক দল নিয়ে কুতুবদিয়ার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ছাড়ে।
মঙ্গলবার দুপুরে এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান শুরুর আগে কেএসআরএম গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, জিম্মি দশা থেকে মুক্ত নাবিকরা এখন আরো সাহসী। কারণ তারা ভয়কে জয় করে দেশে ফিরেছে। তাদের আরো অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে। বাঙালি সাহসী বীরের জাতি। তারা এসব জিম্মি দশাকে ভয় পায় না। তারা ভয়কে জয় করেছে। আজকে আমাদের আনন্দের দিন।
তিনি বলেন, নিরাপদ সমুদ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক শিপিং সংস্থাগুলো কাজ করছে। আশাকরি সফলতা আসবে। এর আগে ২০১০ সালেও জাহান মনি নামের আমাদের আরো একটি জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। সেখান থেকে তারা প্রায় ১০০ দিন পর মুক্তি পায়৷ সে পুরোনো অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এগিয়ে গেছি। আজকের অনূভুতি সবার মুখে হাসি।
মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। এরপর তারা জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যায়। ৩১ দিন জিম্মি থাকার পর ১৪ এপ্রিল ভোররাতে জাহাজটি জলদস্যু মুক্ত হয়। এ সময় ৬৫ জন জলদস্যু জাহাজ থেকে বোটে নেমে যায়।
মুক্তির পর জাহাজটি দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। ২১ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই আল হারমিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে জাহাজটি। জাহাজটিতে থাকা ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা সেখানে খালাস করা হয়। পরবর্তীতে আমিরাতের মিনা সাকার বন্দর থেকে ৫৬ হাজার মেট্রিক টন চুনা পাথর লোড করা হয়। এসব পণ্য নিয়ে দেশের পথে রওনা দেয় এমভি আবদুল্লাহ।