শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশের ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। সেই উত্তেজনায় নতুন করে রসদ দিয়েছে সৌম্য সরকারকে নটআউট দেওয়া থার্ড আম্পায়ারের একটি সিদ্ধান্ত। যদিও এরপর এই বাঁ–হাতি ব্যাটসম্যান বেশিক্ষণ ক্রিজে ছিলেন না। ব্যাট হাতে সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ সংগ্রাম করা নাজমুল হোসেন শান্ত অবশেষে রানে ফিরেছেন। তার ফিফটিতে ভর করে ৮ উইকেটে লঙ্কানদের হারিয়েছে বাংলাদেশ।
প্রথম ম্যাচ হেরে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ আজ (বুধবার) সিরিজে সমতা ফেরাল। এর আগে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে হারের পর বাংলাদেশের সিরিজ জিতেছে মাত্র একবারই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই জয় এসেছিল ২০১৮ সালের আগস্টে। লঙ্কানরা আগে ব্যাট করে এদিন ১৬৬ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল। ফরম্যাটটিতে ১৬৬ বা তারও বেশি লক্ষ্য তাড়ায় টাইগাররা আগে মাত্র দুই ম্যাচে জিতেছিল। তার ভেতর একটি ছিল এই লঙ্কানদের বিপক্ষে (২১৫)।
বাংলাদেশের বড় জয়ের পথটা তৈরি হয়েছিল বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সুবাদে। আগের ম্যাচে দুইশ ছাড়ানো শ্রীলঙ্কাকে আজ তারা ১৬৫ রানেই আটকে দেয়। এরপর টাইগাররা উড়ন্ত সূচনা পায় দুই ওপেনার লিটন-সৌম্য’র জুটিতে। বাকি কাজ সেরেছেন শান্ত ও তাওহীদ হৃদয়। শেষ দুই ওভারে জয় পেতে বাংলাদেশের যখন আর ২ রান দরকার, তখন ফিফটি থেকে ৩ রান দূরত্বে ছিলেন শান্ত। দাসুন শানাকে স্কয়ার লেগে ছয় হাঁকিয়ে তিনি নিজের ফিফটি ও বড় জয় দুটিই নিশ্চিত করেন।
রান তাড়ায় ওপেনিং জুটিতে লিটন-সৌম্য এনে দেন ৬৮ রান। এর ভেতর পাওয়ার-প্লে’র ৬ ওভারেই কোনো উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশ ৬৩ রান তোলে। অবশ্য তার আগে ১০ বলে ১৪ রানে থাকাবস্থায় বোলারের আবেদনে সাড়া দিয়ে আম্পায়ার ক্যাচ আউট দেন সৌম্যকে। সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নেন সৌম্য। রিপ্লেতে আল্ট্রা-এজে স্পাইক দেখা গেছে। যা দেখে আউট ভেবে সাজঘরের পথ ধরেছিলেন সৌম্য। তবে বল–ব্যাটের মাঝে ফাঁকা জায়গা স্পষ্ট উল্লেখ করে সিদ্ধান্ত বদলে নটআউট দেন থার্ড আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুল। বিষয়টি মানতে পারেনি লঙ্কানরা, ক্রিজে তারা ঘিরে ধরেন ফিল্ড আম্পায়ারদের, বাউন্ডারি লাইনে চতুর্থ আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় কোচ ক্রিস সিলভারউডকে। তবে সিদ্ধান্ত আর বদলায়নি।
অবশ্য থার্ড আম্পায়ারের ‘বিতর্কিত’ সিদ্ধান্তে নতুন জীবন পাওয়ার পরও ইনিংস বড় করতে পারেননি সৌম্য। ব্যক্তিগত ১৪ রানের মাথায় রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়ার পর মাথিশা পাথিরানার শিকার হয়েছেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে ২২ বলে করেছেন ২৬ রান। অল্প সময়ের ব্যবধানে ফেরেন আরেক ওপেনার লিটনও। তবে দুজনের জুটি শ্রীলঙ্কাকে কার্যত ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। টাইগারদের বাকি পথ দেখাতে ৮৭ রানের জুটি বাধেন শান্ত-হৃদয়।
যদিও সর্বশেষ বিপিএল ও সিরিজের প্রথম ম্যাচে ফর্ম খুঁজে ফেরা শান্ত’র সঙ্গে হৃদয়ের জুটিটা শুরুতে নড়বড়ে ছিল। দুজনই সময় নিয়ে ক্রিজে থিতু হয়েছেন। এরপর ধীরে ধীরে গতি বাড়িয়েছেন রানের। একই সময়ে শ্রীলঙ্কান বোলাররাও তেমন পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি ব্যাটারদের। তবে অতিরিক্ত রান (২৩) দিয়েছেন হাত খুলে। শেষ পর্যন্ত ১৮.১ ওভারে ৮ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। শান্ত ৩৮ বলে ৪টি চার ও দুই ছক্কায় ৫৩ এবং ২৫ বলে ৩২ রানে অপরাজিত ছিলেন।
লঙ্কানদের হয়ে দুটি উইকেটই নিয়েছেন পেসার পাথিরানা। তবে ৩.৪ ওভার করেই অস্বস্তি নিয়ে নিয়ে তাকে মাঠ ছাড়তে হয়। দুই শিকার ধরতে তিনি খরচ করেছেন ২৮ রান।
এর আগে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করা লঙ্কানদের মিডল অর্ডারও আজ ভালো করছিল। তবে কেউ বড় ইনিংস খেলতে না পারায় তাদের পুঁজিটা বেশি বড় হতে পারেনি। সফরকারীদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৭ রান এসেছে কামিন্দুর ব্যাটে। এছাড়া কুশল মেন্ডিস ৩৬, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ৩২ ও চারিথ আসালাঙ্কা ২৮ রান করেছেন। বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট পেয়েছেন তাসকিন, মেহেদী, মুস্তাফিজ ও সৌম্য। উইকেট না পেলেও সবচেয়ে মিতব্যয়ী বল করেছেন শরিফুল। ৪ ওভারে তিনি মাত্র ২০ রান খরচ করেন।