নেপালের বিপক্ষে ম্যাচে ১৮তম ওভারে তাবরাইজ শামসি এলেন বোলিংয়ে। তখন পর্যন্ত পুরো ক্রিকেট দুনিয়া বুঁদ হয়ে ছিল অঘটনের প্রত্যাশায়। আটলান্টিক পাড়ের ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে এর আগে বিশ্বকাপের বড় অঘটন দেখা হয়ে গিয়েছে। সেবার আফগানিসস্তান হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে। তেমন আরেক অঘটনের অপেক্ষায় ছিল সকলেই।
কিন্তু শামসির ওই ওভারটাই যেন বদলে দিল সমীকরণ। চার বলের ব্যবধানে একই ওভারে তুলে নিলেন নেপালের দুই ইনফর্ম ব্যাটার দীপেন্দ্র সিং আইরে আর আসিফ শেখের উইকেট। আউট হয়েছেন লেগস্ট্যাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে। আর আসিফ শেখ আউট হন দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে।
এরপরেই মূলত কঠিন হয়ে পড়ে নেপালের জয়। ১৮ বলে ১৮ রানের সমীকরণ নেমে আসে ১২ বলে ১৬ রানে। নরকিয়ার করা ১৯তম ওভারে ফেরেন কুশাল মাল্লা। এরপরেই সোমপাল কামির ১০৫ মিটারের ছক্কা বদলে দেয় দৃশ্যপট। সেই ওভারে আসে ৮ রান। শেষ ওভারে নেপালের দরকার ছিল আরও ৮ রান। ওটনিয়েল বার্টম্যানের সেই ওভারের প্রথম দুই বল ছিল ডট। পরের বলেই গুলশান ঝায়ের চার।
তিন বলে চার রানের সমীকরণ মেলাতে কষ্ট হওয়ার কথা না। যদিও সেখানেও দক্ষিণ আফ্রিকা আদায় করে নেয় ডটবল। শেষ বলে দরকার ছিল দুই রান। কিন্তু বার্টম্যানের শেষ বলে ব্যাটে বলে হয়নি। সেখানেই রানআউট হয়ে ১ রানে হারের হতাশায় ডুবতে হয় নেপালকে। সেইসঙ্গে এবারের বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয় তাদের।
অথচ ম্যাচের ১৮তম ওভারের আগ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ছিল নেপালের দখলেই। ১১৬ রানের ছোট লক্ষ্যে খেলতে নেমে দুর্দান্ত শুরু করেছিল তারা। বল হাতে চার উইকেট পাওয়া কুশাল ভুর্তেল আর উইকেটরক্ষক আসিফ শেখের জুটিতে আসে ৩৫ রান। দুজনেই যখন নেপালের দর্শকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন, তখনই আঘাত হানেন শামসি। বোল্ড হয়ে ফেরেন ভুর্তেল। অধিনায়ক রোহিত পোডেলকেও সুযোগ দেননি শামসি। ১ বল পরেই তাকে ফেরান। সেবারেও দারুণ সুইংয়ে বোল্ড করেন এই লেগি।
অনিল শাহকে নিয়ে এরপর আসিফ শেখের ৫০ রানের জুটি। নেপাল তখনও জয়ের স্বপ্নে বিভোর। উইকেটের জন্য মরিয়া হয়ে আক্রমণে আসেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক মার্করাম নিজেই। পার্ট-টাইমার এই অফস্পিনারের আগমন কাজে লাগল। ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট অনিল।
এরপর ১৮তম ওভারে শামসির আরেকটা ম্যাজিকাল ওভার। আর শেষ দুই ওভারে পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচের দৃশ্যপট। শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞতা আর গেইম অ্যাওয়ারনেসের সুবাদে ১ রানের জয় প্রোটিয়াদের।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে সেন্ট ভিনসেন্টের পিচে দীপেন্দ্র সিং আইরে এবং কুশাল ভুর্তেলের বোলিং তোপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেইন্ট ভিনসেন্টের এই পিচেই নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১৪৯ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের পিচের তুলনায় ক্যারিবিয়ান পিচে কিছুটা অন্তত রানের দেখা মিলেছে। রিজা হেনড্রিকস আভাস দিয়েছিলেন বড় সংগ্রহ দাঁড় করানোর।
কিন্তু দীপেন্দ্রর তিন আর ভুর্তেলের চার উইকেটের সুবাদে চাপে পড়ে যায় প্রোটিয়ারা। শেষদিকে ত্রিস্টান স্টাবস ১৮ বলে ২৭ রান করে স্কোরবোর্ডে নিয়ে আসেন ১১৫ রান। লো-স্কোরিং ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মান বাঁচাতে সেটিই হয়ে যায় যথেষ্ট।