আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় পার্টি। ইতোমধ্যে দলটি ২৮৭টি আসনে মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছে। তবে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন থেকে সরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি এবং সুশিলরা।
এদিকে বুধবার (৬ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বৈঠক করেছে জাতীয় পার্টি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা ৬০টি আসন চায়। তবে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ২০টি আসন দিতে রাজি আছে বলে আজকের বেলা নিশ্চিত হয়েছে।
আসন ভাগাভাগি নিয়ে দু’দলের মধ্যে এক ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে, চলছে টানাপোড়েনও। তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, এই টানাপোড়েন স্বাভাবিক। খুব শিগগির এই টানাপোড়েন কেটে যাবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে আসন সমঝোতা হয় সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ যে কটি আসন ছেড়ে দিবে, সে কটি আসন থেকে নৌকা প্রতীক প্রত্যাহার করতে হবে। অর্থাৎ ওই সমস্ত আসনে নৌকার কোন প্রার্থী থাকবে না। আর এটি হলে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, না হলে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে সরে যাবে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্য বিভিন্নভাবে বলা হচ্ছে।
যদিও প্রকাশ্যে জাতীয় পার্টি বলছে, আমরা সাবলম্বী হয়েছি, সাবলম্বী ভাবেই থাকতে চাই। সরকারের সাথে সমঝোতার কোনো অভিপ্রায় আমাদের নাই। কিন্তু জাতীয় পার্টির মহাসচিবের এই বক্তব্যের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির মধ্যে আসন সমঝোতার বৈঠকের খবর প্রকাশিত হয়।
জাতীয় পার্টির যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তারা আসন সমঝোতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারা বলছেন, জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা এখন এতো শক্তিশালী নয় যে, নৌকা প্রতীকের সঙ্গে লড়াই করে তারা টিকে থাকবে। তবে শুধু আসন সমঝোতাই জাতীয় পার্টির একমাত্র উদ্বেগের বিষয় নয়, আসন সমঝোতার পাশাপাশি জাতীয় পার্টির আরেকটি দাবি রয়েছে।
তারা বলছে— যে সমস্ত আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়া হবে, সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকেও বসিয়ে দিতে হবে। কারণ যদি নৌকা প্রার্থী বসে যায় তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে আওয়ামী লীগের লোকজন কাজ করবে এবং এটি জাতীয় পার্টির প্রার্থীর জন্য আরেকটি বড় বিপর্যয়ের কারণ হবে। এ রকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হলে জাতীয় পার্টির পক্ষে নির্বাচনি বৈতরনী পাড় হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রায় চার শতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এবং এই সমস্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে বসিয়ে দেওয়া বা হুমকি দিয়ে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করার কোনো অভিপ্রায় আওয়ামী লীগের নাই। বরং আওয়ামী লীগের নির্বাচনি কৌশলের মধ্যেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন উন্মুক্ত হবে। কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়া যাবে না এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেন সমান সুযোগ সুবিধা পায় সেটি নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নিদের্শনা দিয়েছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টিকে যে কটি আসনই ছাড় দেওয়া হোক না কেন সেই আসনগুলোতে স্বতন্ত্র আওয়ামী প্রার্থী বা বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে তাদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করতে হবে। এই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে কয়েকটি আসন ছাড়া বাকিগুলোতে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের কি হাল হবে তা সহজে অনুমান করা যায়। কারণ যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাদের মধ্যে আলাদা উৎসাহউদ্দীপনা যেমন রয়েছে তারা জনপ্রিয় জেনেই তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঝুঁকি নিয়েছেন।
বড় কথা হচ্ছে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী যদি না থাকে তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কাজ করবেন। জাতীয় পার্টির জন্য কেউ কাজ করবেন না। এ রকম একটি বাস্তবতায় জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে রাখা না রাখা নিয়ে একটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর এই চ্যালেঞ্জে বড় রকমের বাতাস দিচ্ছে বিএনপি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
সুশীল সমাজের একাধিক প্রতিনিধির জাতীয় পার্টি যেন নির্বাচন থেকে সরে যায় সেজন্য শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করছে। সেজন্য জাতীয় পার্টির বিভিন্ন নেতার সঙ্গে তারা যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন। বিএনপিও অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে যে, জাতীয় পার্টি নির্বাচনের ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত কি সিদ্ধান্ত নেয় তা দেখার। জাতীয় পার্টি যদি কোনো কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় তাহলে সেটি হবে নির্বাচনের জন্য একটি বড় বিপর্যয়। তাহলে এই নির্বাচনে গ্রহণযোগ্যতার একটি বড় সংকট তৈরি হবে। আর সেই সংকট সৃষ্টি করার জন্যই এখন কৌশল নিয়েছে বিএনপি। আর তাদেরকে এই কৌশল বাস্তবায়নে মদদ দিচ্ছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে সরে গেলে নির্বাচন অনিশ্চিত হবে এ রকম একটি ভাবনা থেকেই মাঠে নেমেছে বিএনপি এবং তাদের অনুসারী সুশীলরা।