হোয়াইটওয়াশ ঠেকাতে রেকর্ডই গড়তে হতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। টপকে যেতে হতো বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। কিন্তু সেটা আর হতে দিলেন না বাংলাদেশি বোলাররা। কিংসটাউনের আর্নস ভেইল ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশের দেয়া ১৯০ রানের লক্ষ্য ছুঁতে নেমে ১০৯ রানে আটকে গেছে উইন্ডিজ। ৮০ রানের এই জয়ে প্রথমবার টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিবিয়ানদের হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। একইসাথে এক যুগ পর দেশের বাইরেও প্রতিপক্ষকে করল বাংলাওয়াশ।
সর্বশেষ ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডকে তাদের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে বাংলাওয়াশের তেঁতো স্বাদ দিয়েছিল বাংলাদেশ। এক যুগ পর পাওয়া দারুণ এই অর্জনে ব্যাট হাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাকের আলী অনিক। বল হাতে এই ম্যাচেও ধারাবাহিকতার পরিচয় দিয়েছেন শেখ মাহেদী হাসান-তাসকিন আহমেদরা। তবে আলাদা করে নজর কেড়েছেন রিশাদ হোসেন।
১৯০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই তাসকিনের তোপের মুখে পড়ে উইন্ডিজ। তার দারুণ ইনসুইংয়ে এলবিডব্লিউ হন ব্র্যান্ডন কিং। রিভিউ নিইয়েও রক্ষা পাননি এই সিরিজে টানা তৃতীয়বার তাসকিনকে উইকেট দেয়া এই ডানহাতি ওপেনার।
তৃতীয় ওভারে দ্বিতীয় সাফল্য আসে শেখ মাহেদীর হাত ধরে। এই অফস্পিনারকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেট বাউন্ডারিতে বদলি ফিল্ডার আফিফ হোসেনের হাতে ক্যাচ দেন অভিষিক্ত জাস্টিন গ্রিভস। দুই চার এক ছক্কায় দারুণ শুরুর ইঙ্গিত দিলেও নিকোলাস পুরানকে ইনিংস বড় করতে দেননি মাহেদী। উইন্ডিজের দলীয় ৪৫ রানে সিরিজে তৃতীয়বার পুরানের উইকেট নিলেন তাকে বোল্ড করে।
এক রানের ব্যবধানে পড়ে আরো দুই উইকেট। হাসান মাহমুদের করা সপ্তম ওভারে শর্টার লেংথের বল ঠিকমতো খেলতে পারেননি রোস্টন চেইজ। মিড অনে খেলতে চাইলেও ব্যাটের ওপরের অংশে লেগে ক্যাচ যায় মিড অফে। লাফিয়ে উঠে বেশ ভালো এক ক্যাচে তাকে ফেরান শেখ মাহেদী। এক বল পর রভম্যান পাওয়েলের ডাকে সিংগেল নিতে গিয়ে আলসে ভঙ্গির দৌড়ে মিড অন থেকে রিশাদ হোসেনের করা সরাসরি থ্রোতে রান আউট হন জনসন চার্লস। ১৮ বলে ২৩ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটার। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক পাওয়েলকেও ফিরিয়েছেন রিশাদই, তবে বল হাতে। এই লেগির ফ্লাইটেড এক টার্নিং ডেলিভারিতে তুলে মারতে গিয়ে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন পাওয়েল।
৬০ রানে ছয় উইকেট হারানোর পর গুদাকেশ মোতিকে সাথে নিয়ে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন রোমারিও শেফার্ড। সপ্তম উইকেটে গড়েন ২৬ বলে ৩৫ রানের জুটি। ফ্লাইটেড ফুল লেংথ ডেলিভারিতে মোতিকে ফিরিয়ে বড় হতে থাকা জুটি নিজের শেষ ওভারে গুঁড়িয়ে দেন সেই রিশাদই। একই ওভারের চতুর্থ বলে আলজারি জোসেফকে ফিরিয়ে পান নিজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগারের দেখা। চার ওভার বল করে ২১ রান দিয়ে নেন তিন উইকেট।
তিন ছক্কা এক চারে ২৭ বলে ৩৩ রান করা শেফার্ডকে ফিরিয়েছেন তানজিম সাকিব। ডানহাতি এই পেসারের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে হাসান মাহমুদের হাতে ক্যাচ দেন শেফার্ড। ওবেদ ম্যাকয়কে বোল্ড করে ইনিংস শেষ করেন তাসকিন।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে জাকের আলী অনিকের ক্যারিয়ার সেরা ৭২* রানের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৭ উইকেটে ১৮৯ রান তুলেছে বাংলাদেশ। যা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। একইসাথে টি-টোয়েন্টিতে বিদেশে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহও এটি।
সৌম্য সরকারের জায়গায় একাদশে আসা পারভেজ ইমনের শুরুটাও হয় দুর্দান্ত। দুর্দান্ত এক কভার ড্রাইভ, ব্যাকফুট পাঞ্চ, শর্ট লেংথের বলে পুল। তার সাথে লিটনও ব্যাট করছিলেন স্বচ্ছন্দে। দারুণ সব স্ট্রোকপ্লেতে দুজন ওপেনিং জুটিতে তোলেন ৪৪ রান। তবে লিটন ভুগেছেন সেই পুরনো সমস্যাতেই। দুই বল আগে দারুণ এক স্ট্রেইট ড্রাইভে চার মেরে আউট হয়েছেন ছটফট করে তুলে মারতে গিয়ে। ১৪ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
লিটন ফিরলেও অন্য প্রান্তে শট খেলতে থাকেন ইমন। তবে আলজারি জোসেফের গতিময় বলে ফ্লিক করতে গিয়ে জাস্টিন গ্রিভসকে ক্যাচ দেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। চারটি চার ও দুটি ছক্কায় ২১ বলে ৩৯ রান করেন তিনি। এরপর তানজিদও সুবিধা করতে পারেননি। চারে নেমে মিরাজ খেলেন ২৯ রানের ইনিংস। তার সাথে জাকেরের ৩৭ রানের জুটিতে শুরুর ধকল কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশ।
শেষদিকে দেখা গেছে ঘটনাবহুল এক ওভার। ইনিংসের ১৫তম ওভারেই ঘুরেছে বাংলাদেশ আর জাকেরের ভাগ্যের মোড়। রোস্টন চেইজের সেই ওভারের তৃতীয় বলে স্কয়ার লেগে ঠেলে দুই রানের জন্য দৌড়ান জাকের। কিন্তু শামীম পাটোয়ারির সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে দুজনই দৌড়ান ব্যাটিং প্রান্তে। নিকোলাস পুরানের থ্রো থেকে নন স্ট্রাইকিং এন্ডের স্টাম্প ভাঙেন চেইজ। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছিল জাকেরই আউট। মাঠ ছেড়ে ড্রেসিংরুমেও চলে যান তিনি। কিন্তু থার্ড আম্পায়ার রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত জানান, জাকের যখন ব্যাট গ্রাউন্ড করছেন পপিং ক্রিজে, তখনো হাওয়ায় ভাসানো ছিল শামীমের ব্যাট; আউট হন তিনি।