‘গণভবন থেকে বলছি। আপনি তো মনোনয়নপ্রত্যাশী। আপনার জন্য কিছু নির্দেশনা আছে। আপনি কি শুনতে প্রস্তুত?’ হঠাৎ করেই এমন ফোনকলে মূলত অপ্রস্তুত হয়ে কিছুটা ভড়কে গেছেন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কেউ কেউ।
আর সে সুযোগ নিয়েই আগানো হচ্ছে পরের ধাপের কাজে। বলা হচ্ছে, ‘আপনি আপনার আসন থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন নিশ্চিত। তবে সেক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে। পার্টি ফান্ডেরও বিষয় আছে। একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া হচ্ছে। ২০ কোটি টাকা পাঠাবেন। একবারে নয়, প্রতি সপ্তাহে ৫ কোটি করে পাঠালেই চলবে।’
এভাবেই আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ নানা পরিচয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে একটি প্রতারক চক্র। তাদের টার্গেটের তালিকায় ছিল এ বছর নতুন মনোনয়নপত্র কেনা কিংবা হঠাৎ করে রাজনৈতিক নেতা বনে যাওয়া বিত্তশালীরা। চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল।
ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, বাবা তার মেয়েকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন প্রতারক চক্রটি। তারা কখনো গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আবার কখনো ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রী পরিচয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ফোন দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিশাল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করেছিলেন।
সম্প্রতি নোয়াখালী থেকে বাবা মো. ইয়াসিন (৪৬) ও মেয়ে সুরাইয়া ইয়াসমিনকে (২২) গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সদস্যরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, ইয়াসিন তার মেয়েকে নিয়ে গড়েন নির্বাচনকেন্দ্রিক এ অভিনব প্রতারণার জাল। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ফোন করে বিভিন্ন পরিমাণের টাকা দাবি করেন তারা। কখনো বাবা আবার কখনো মেয়ে ফোন করতেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি এক মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীকে ফোন করে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার কথা বলে দলীয় ফান্ডে ২০ কোটি টাকা জমা দেওয়ার দাবি করেন তারা। টাকার অংক অস্বাভাবিকভাবে বেশি হওয়ায় বিষয়টি দলের এক কেন্দ্রীয় নেতাকে জানান ওই মনোনয়নপ্রত্যাশী। পরে ডিবির কাছে অভিযোগ করেন।
অভিযোগে বলা হয়, চক্রটি গণভবনের নাম ব্যবহার করে এমন প্রতারণার অপচেষ্টা চালায়। এরপর ফোনকল করা ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দারা দেখতে পায় চক্রটির সদস্য কেবল বাবা ও মেয়ে। তারাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনের কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন জনকে ফোন করেছেন। গ্রেপ্তারের সময় উদ্ধার হওয়া মোবাইলে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের রেকর্ডও পাওয়া গেছে।
ডিবি কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার নামে মোবাইল নম্বর ‘ট্রু কলারের মাধ্যমে’ সেভ করে বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করে বাবা-মেয়ে। সবাইকে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ট্রু কলারে নাম দেখে কল পেলেই টাকা দিয়ে নমিনেশন পাবেন এমন কোনো কথা নাই।
জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন প্রতারণার বিষয়ে গোয়েন্দাপ্রধান হারুন আরও বলেন, একেক সময় প্রতারণার একেকটি মৌসুম থাকে। বর্তমানে চলছে মনোনয়ন প্রতারণা। তপশিল ঘোষণার পরেই নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে তারা। মনোনায়নপ্রত্যাশীদের ফোন করে নমিনেশন পেয়েছেন বা পাবার নিশ্চয়তা দিয়ে দলীয় ফান্ডে টাকা দিতে বলেন। অনেকেই এ ফাঁদে পা দিয়ে কিছু টাকাও দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ টাকা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।