বর্তমানে যারা জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য আছেন, তাদের মধ্যে জনপ্রিয় এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসার মতো প্রার্থীদের আসনগুলো ছেড়ে দিতে রাজি আওয়ামী লীগ। এসব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহারের সবুজ সংকেত দেওয়া হলেও জাতীয় পার্টি তা মানতে নারাজ।
এবারের নির্বাচনে ৩৫ থেকে ৪০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহার চায় জাপা। শুধু তাই নয়, জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপিদের আসনগুলোতে নৌকার প্রার্থীসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নও প্রত্যাহার চায় জাতীয় পার্টি। তবে তাতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ।
মূলত কত আসনে ছাড় দেওয়া হবে, স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে কি-না, সরকারে জাতীয় পার্টির ভাগ্যে কী জুটবে, এসব বিষয় চূড়ান্ত করা নিয়ে ঝুলে আছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির আলোচনা।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সুত্র জানায়, নৌকার প্রার্থীসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও প্রত্যাহার চান জাতীয় পার্টির নেতারা। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যেকার বৈঠকে বিষয়টি উঠে আসলেও আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রত্যাহারের প্রশ্নে কোনো নিশ্চয়তা দেননি। বরং দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা জাপা নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় প্রার্থীদের বলে দিয়েছেন, অন্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই করে নৌকা প্রার্থীদের জিতে আসতে হবে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেও আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করতে পারেনি জাতীয় পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেওয়ার কথা জানালেও দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ অধিকাংশ প্রার্থীই এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে আসন ভাগাভাগি করে জিততে চান।
আসন ভাগাভাগি করতেই চুন্নুর নেতৃত্বে জাপার প্রতিনিধিদল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমন্বয়ের জন্য দফায় দফায় বৈঠক করেছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক জোট না থাকলেও ৩৫-৪০ আসনে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার চান জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা। সেটা আদায় করা সম্ভব না হলে জাপার বর্তমান এমপিরা যাতে অতীতের মতো অনায়াসে জিতে আসতে পারেন, এমন টার্গেট নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন।
জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা চান, যারা এতদিন এমপি ছিলেন না, কিন্তু দলের মধ্যে সিনিয়র, তাদের আসন সমন্বয় করতে হবে। শুধু বর্তমান এমপিদের আসনে হলে হবে না। এ নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব নিজেই অস্বস্তিতে রয়েছেন। কারণ দলের মধ্যে এই অংশটি অনেক বড়।
তাদের দাবি, বারবার আসন সমঝোতার নামে দলের একটি অংশ এমপি নির্বাচিত হন। বড় অংশটি দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করলেও তারা উপেক্ষিত হন অধিকাংশ সময়। আসন ভাগাভাগিতে এবার তারা মূল্যায়ন চান। তাদের বাদ দিয়ে আসন সমঝোতা হলে এসব নেতা বিদ্রোহ করতে পারেন। এমনকি এসব নেতা নির্বাচন বর্জন করতে পারেন বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী।
আসন ভাগাভাগিসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে শুক্রবার রাতেও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় পার্টির নেতারা। দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতেও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তবে প্রত্যেকটি বৈঠক হচ্ছে গোপনে। বৈঠকের স্থান, আলোচ্য বিষয়—কোনো কিছুই জানানো হচ্ছে না। এমনকি তাৎক্ষণিক কোনো তথ্যও দেওয়া হচ্ছে না। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আজকের বৈঠকেই আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।
আসন ভাগাভাগি কী পর্যায়ে আছে, তা খোলাসা করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। শনিবার বনানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আলোচনা চলছে। কারো প্রত্যাহার, কোনো মার্কা প্রত্যাহারে আমাদের কৌশল আছে, এটা আমরা এখনই বলতে চাই না।
আপনারা নাকি তালিকা দিয়েছেন আওয়ামী লীগকে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখুন, আমার যে টেকনিক, যে কৌশল, সবগুলো কি আমরা প্রকাশ করব? এটা কি কেউ করে? কেউ করে না।
‘লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমের চিঠি লিখব, এটা কি বাপ-মাকে বলা যায়? বলা যায় না। পরে যখন হয়ে যায়, তখন বলা যায়। যখন বিয়ে-শাদি করি, তখন তো বলতে হয়।’
আগামীকাল কী ধরনের ঘোষণা আসছে? সংবাদ সম্মেলনের একেবারে শেষ দিকে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই যে আলাপ-আলোচনা… এসব বিষয়ে কালকেও কথা বলব আপনাদের সঙ্গে।’
আওয়ামী লীগের সঙ্গে বারবার আলোচনার প্রধান বিষয় আসন বণ্টন নয়, নির্বাচন সুষ্ঠু করা, এই দাবি করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, কিছু আসনে কিছু সংসদ সদস্যকে জিতিয়ে আনতে সমঝোতার কথাও আছে।
তবে একাধিক সাংবাদিকের নানা প্রশ্ন সত্ত্বেও এই আলোচনার ফল এখনই প্রকাশ না করে তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক কৌশলের সবকিছু কেউ বলে দেয় না।
ভবিষ্যতে প্রকাশও হবে, এমন ইঙ্গিত দিয়ে চুন্নু আবার প্রেমের প্রথম চিঠির উপমা টেনেছেন। তিনি বলেছেন, এই চিঠির কথা কেউ বাবা-মাকে বলে না। কিন্তু বিয়ের প্রসঙ্গ এলে তখন সম্পর্কের কথা বলতেই হয়।
আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আসন সমঝোতার জন্য একটি দিন বাকি আছে। এর মধ্যেই শনিবার রাজধানীর বনানীতে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।