ভারতে টানা দেড় মাস ধরে সাত ধাপে লোকসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে মঙ্গলবার (৪ জুন) ভোটের ফল প্রকাশিত হয়েছে। গত দুই বারের মতো এবারও ক্ষমতাসীন দল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে।
১৮তম লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ জোট পেয়েছে ২৯৫টি আসন, অপরদিকে ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ২৩১টি আসন। ফলে এনডিএ টানা তৃতীয়বারের জন্য দেশটিতে সরকার গঠন করতে চলেছে দেশে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। তবে ইন্ডিয়া জোটের কাছে সরকার গঠনের ক্ষীণ সম্ভাবনা এখনও আছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে এবারের লোকসভা নির্বাচনে চমক দেওয়ার মতো কিছু ঘটনা ঘটেছে। সেগুলো কী কী, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
সব বাধা টপকে কংগ্রেসের ফিরে আসা
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৪৪টি ও ২০১৯ সালে নির্বাচনে ৫২টি আসনে জয় পেয়েছিল কংগ্রেস। তবে এবার ৫২ থেকে একলাফে উঠে ৯৯-তে পৌঁছেছে কংগ্রেস। ইন্ডিয়া জোট গঠন, রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা, দলপ্রধান মল্লিকার্জুন খাগড়ের নেতৃত্ব বা প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর জোরালো প্রচারণা- সবকিছুই এবারের নির্বাচনে ঐতিহাসিক এ দলটির লাভের হিসাব বাড়িয়েছে। সাধারণ নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের মনে কংগ্রেস যে দাগ কাটতে সক্ষম হয়েছে, এবারের ভোটের ফল তারই প্রমাণ। নানা বাধা টপে কংগ্রেসের এভাবে ঘুরে দাঁড়ানো চমকই বটে।
ফের চলতে শুরু করেছে সমাজবাদী পার্টির ‘সাইকেল’
উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টির (এসপি) নির্বাচনী প্রতীক ‘সাইকেল’। থমকে থাকা সেই সাইকেল এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যেন রকেট গতি পেয়েছে। ২০১৯ সালে মাত্র ৫টি আসনে জিতেছিল সাইকেল বাহিনী। তবে এবার এবার বিজেপিকে ধরাশায়ী করে দিয়েছে সমাজবাদী পার্টি। নেতা অখিলেশ যাদব শুধু দলের ভেতরের দ্বন্দ্ব মেটাতেই সফল হননি, বিশাল এ রাজ্যে নতুন রাজনৈতিক জোটও গড়ে তুলেছেন। ফলস্বরুপ, উত্তরপ্রদেশে এবার একাই ৩৭টি আসন জিতেছে সমাজবাদী পার্টি। তাদের সমর্থনে কংগ্রেস এই রাজ্যে ৬টি আসনে জয় পেয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে উত্তর প্রদেশে পাঁচ নম্বর অবস্থানে থাকা সমাজবাদী পার্টির সর্ববৃৎ দল হয়ে ওঠা একটি বড় চমক।
পশ্চিমবঙ্গে মমতার ‘খেলা’
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর পশ্চিমবঙ্গে বদলে গিয়েছিল রাজনৈতিক সমীকরণ। রাজ্যটি থেকে বিজেপি গতবার ১৮টি লোকসভা আসন জিতেছিল। পরবর্তীতে অবশ্য বিধানসভা নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস একচেটিয়াভাবে জয়ী হয় পশ্চিমবঙ্গে। আর এবারের লোকসভা ভোটেও বিধানসভা ভোটের ম্যাজিক ধরে রাখল তৃণমূল কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গে ২৯টি আসন পেয়ে বিপুলভাবে জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিশেষ করে বিজেপির শক্ত ঘাটি হিসেবে পরিচিত বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম আসনে এবার তৃণমূল কংগ্রেসের জয় বড় একটি চমক।
ফুরিয়ে যাননি নীতীশ কুমার
বিহারের ৯ বারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। বারবার জোট বদল করার কারণে সমালোচকরা তাকে ‘পল্টুরাম’ বলে থাকেন। তবে বিহার এবং জাতীয় রাজনীতিতে যে তিনি এখনও অপ্রাসঙ্গিক নন, তা ফের বুঝিয়ে দিলেন নীতীশ কুমার। বিজেপির সঙ্গে মিলে তিনি এবারেও ১২টি আসনে জয়ী বিহারে। এই আবহে তাকে নিয়ে এখন টানাটানি শুরু করেছে ইন্ডিয়া জোট। তাকে ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে একটি রিপোর্টে। এই আবহে নীতীশের ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠা একটি বড় চমক।
অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবুর প্রত্যাবর্তন
অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডু পোড় খাওয়া রাজনীতিক। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর তিনি জাতীয় রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছিলেন। তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিজেপির সঙ্গে জোট বেধে রাজ্যটিতে ফের নিজের দলের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করলেন চন্দ্রবাবু। এবারে লোকসভা নির্বাচনে তার দল টিডিপি ১৬টি আসন পেয়েছে। এই আবহে ইন্ডিয়া জোটের পক্ষ থেকে তাকে কাছে টানার চেষ্টা শুরু হয়েছে।
মহারাষ্ট্রে দল ভাঙিয়ে লাভ হলো না বিজেপির
মহারাষ্ট্রে শিবসেনা এবং এনসিপি-তে ভাঙন ধরিয়ে সরকার গঠন করেছিল বিজেপি। তবে তাদের নতুন জোট শরিকরা সেভাবে লাভের মুখ দেখাতে পারেনি বিজেপিকে। বরং কংগ্রেস এই রাজ্যে সর্ববৃহৎ দল হয়েছে। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস ১৩ আসন পেয়েছে, উদ্ধব ঠাকরের দল ৯, শারদ পাওয়ারের দল ৮। আর বিজেপি পেয়েছে মাত্র ৯টি আসন। অজিত পাওয়ারের এনসিপি ১টি ও একনাথ শিন্ডের সেনা ৭টি আসন।
রাজস্থানে কংগ্রেসের লড়াই
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা ছিল, রাজস্থানে সহজ জয় পাবে বিজেপি। রাজ্যটিতে কংগ্রেসের সামনে বহু বাধাবিপত্তি ছিল। এত কিছুর পরও সেখানে তুমুল লড়াই করেছে দলটি। বিজেপির ১৪টির বিপরীতে কংগ্রেসের আট আসনে জয় পাওয়াটা ইতিহাস হয়ে থাকবে।