একসময় ছিল নিজের মালিকানাধীন পিকআপ ভ্যান। সেই গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে ও এক্সেলেটরে চাপ দিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ভাড়ায় চালিয়ে যে আয় ছিল তাতে কোনো অভাব ছিল না সংসারে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ছিলেন তিনি।
কিন্তু একরাতের সড়ক দুর্ঘটনা মুহুর্তেই পাল্টে দিল নুর মোহাম্মদের জীবন। এখন পঙ্গুত্ব জীবনযাপন করছেন তিনি। হাঁটাচলা করতে ক্র্যাচ এখন তার জীবনসঙ্গী।
নুর মোহাম্মদ চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট পৌরসভার জামালপুর গ্রামের ৭নং ওয়ার্ডের মন্নান মিস্ত্রী বাড়ির বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মোস্তফার চতুর্থ সন্তান। বর্তমানে তিনি মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে অবস্থিত সরকারের তৈরিকৃত আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা।
জানা যায়, ২০১৬ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর লালপোল অংশে গাড়ির চাকা পাংচার হলে গাড়ি থামিয়ে তা মেরামত করার সময় পেছন থেকে ধাক্কা দেয় দ্রুতগতির একটি কার্ভাডভ্যান। দুর্ঘটনায় নুর মোহাম্মেদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গিয়ে কোমর থেকে পা অবশ হয়ে পঙ্গুত্ব জীবনযাপন করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, আশ্রায়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে দুর্ঘটনায় আহত নুর মোহাম্মদ হুইল চেয়ারে ভর দিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নিজে রান্না করে খাওয়ার সার্মথ্য নেই। বেশিরভাগ দিন যায় শুকনো চিড়া মুড়ি খেয়ে। মাঝে মাঝে প্রতিবেশি তাসলিমা আক্তার রান্না করে দেন। তাসলিমার দুই সন্তান আবিরুল ও আল নোমান তাকে গোসল করতে ও হুইল চেয়ার দিয়ে ঘর থেকে বের হতে সহযোগিতা করে।
তাসলিমা আক্তার আজকের বেলাকে বলেন, ‘নুর মোহাম্মদ ভাইয়ের কষ্ট দেখে নিজের কাছে খুব খারাপ লাগে। একা একা কিছুই করতে পারে না। চলতে-ফিরতে আমার দুই ছেলে তাকে সহযোগিতা করে। আমরা নিজেরাই গরিব। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।’
নুর মোহাম্মদ আজকের বেলাকে বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার ৪ বছরের মাথায় আমার জমানো টাকা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। মূলত টাকাগুলো দিয়ে আমার চিকিৎসার কথা তুলেছিলাম। তখন আমার স্ত্রী দুই সন্তান ও জমানো টাকা নিয়ে তালাক না দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে সংসার পাতে। তখন থেকে আমার অসহায়ত্ব বেড়ে যায়। এরমধ্যে ২০২২ সালে আমার কোমরের নিচে ও পেছনে ঘা হয়ে পচন দেখা দেয়। তখনকার মিরসরাইয়ের ইউএনও মিনহাজুর রহমান স্যারের সহযোগিতায় ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ণ ইনস্টিটিউটে আমার অপারেশন হয়। সুস্থ হয়ে ফেরার পর একই জায়গায় আবার পচন দেখা দেয়।’
এখন অপারেশনের জন্য আমার প্রায় দেড় লাখ টাকা প্রয়োজন। তাছাড়া আমার অবশ হওয়া কোমর ও পায়ের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ৩ লাখ টাকা। যেখানে ১০ টাকার ঔষধ কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই, সেখানে এত টাকা দিয়ে চিকিৎসা কিভাবে করবো?— যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। দেশের স্বাধীনের জন্য আমার বাবা যুদ্ধ করেছে। প্রতি তিনমাস অন্তর প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আর কোনো সহযোগিতা পাই না। পুরনো বন্ধু ও পরিচিতজনদের সহযোগিতা নিয়ে কষ্টে দিন যায় আমার। আমাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রশাসন এবং চেয়ারম্যানসহ সবার কাছে বিনীত অনুরোধ করছি— সবাই যেন আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।’
যোগাযোগ করা হলে মিরসরাই সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল আলম দিদার বলেন, দুঘর্টনায় আহত নুর মোহাম্মদকে আগেও প্রশাসনের সহযোগিতায় অপারেশন করা হয়েছিল। পুনরায় অসুস্থতার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এখন আপনাদের মধ্যমে বিষয়টি জানলাম। প্রশাসনের সাথে কথা বলে শিগগির তার চিকিৎসার ব্যপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তাকে বিকাশ, নগদ ও রকেট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সাহায্য পাঠাতে ০১৬৪৩-৪৩৩৪০৬ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।