সবারবেলায় সত্য বলি

আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করুন—সরকারকে ইকবাল করিম ভূঁইয়া

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা চলার মধ্যে সংবাদ মাধ্যমের সামনে এলেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়াসহ সাবেক একদল সেনা কর্মকর্তা।

সেনাবাহিনীকে সেনাছাউনীতে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। চলমান সহিংসতায় যেসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, জাতিসংঘের মাধ্যমে তার তদন্তের দাবিও তারা তুলেছে।

কোটা সংস্কারের যে দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে- সেই দাবিকে যৌক্তিক বলেই মনে করছেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তারা।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গত ১৫ জুলাই সহিংসতায় গড়িয়ে দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানির পর গত ১৯ জুলাই কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করে সরকার।

আদালতের নির্দেশনায় সরকার কোটা সংস্কার করলেও হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে শনিবার অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই ২০১২ েথকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্বে থাকা জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া তার ফেইসবুকে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষের কথা জানিয়েছিলেন।

রোববার (৪ আগস্ট) অসহযোগের প্রথম দিনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে বিভিন্ন জেলায় কয়েকজনের মৃত্যুর মধ্যে ঢাকার মহাখালীতে রাওয়া ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আসেন অবসরপ্রাপ্ত অর্ধ শতাধিক সেনা কর্মকর্তা, যেখানে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ইকবাল করিম ভূঁইয়া।

চলমান আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এরপর ইকবাল করিম ভূঁইয়া বলেন, আমাদের সীমান্ত এই মুহূর্তে অরক্ষিত। ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলন দমনের জন্য সীমান্ত হতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিজিবি সদস্য প্রত্যাহার করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে সশস্ত্র বাহিনীকে অবিলম্বে সেনা ছাউনিতে ফিরিয়ে নিয়ে যে কোনও আপৎকালীন সঙ্কট মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন।

এই আন্দোলনে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধানের উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড় করাবেন না।

দেশব্যাপী হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, গুম ও গণগ্রেপ্তারে’ উদ্বেগ প্রকাশ করে সহকর্মীদের পক্ষে ইকবাল করিম ভূঁইয়া বলেন, গত তিন সপ্তাহ যাবত সারা দেশব্যাপী হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, গুম এবং গণগ্রেপ্তারের যে ঘটনা চলেছে, আমরা তাতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, মর্মাহত এবং ব্যথিত।

‘অজস্র কিশোর-তরুণের অকাল জীবনাবসান ঘটেছে। আজ অভিভাবক হিসেবে নিজেদেরকে দায়মুক্ত ভাবতে পারছি না। তাই, বিবেকের তাড়নায় আমরা দেশবাসীর সামনে হাজির হয়েছি। বৈষম্যবিরোধী এই সংগ্রামের সকল শহীদের রুহের মাগফেরাতের জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে দোয়া করছি।’

সাবেক এ সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ড, জখম, গুলি, হামলা, ভাংচুর, সন্ত্রাসের ঘটনার স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত হতে হবে জাতিসংঘের নেতৃত্বে এবং তাদের অধীনে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সকলে বাংলাদেশের মানুষকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করি এবং ভালোবাসি। সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সকল সদস্য সার্বভৌমত্ব রক্ষার শপথ ও সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের প্রস্তুতি নিয়েই এই পেশায় নিয়োজিত আছেন।

আজ দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদের সকল সহকর্মীকে বিনীতভাবে অনুরোধ করব, সৈনিকের পেশার সর্বোচ্চ মর্যাদা, মানবিকতা ও নৈতিক মানদণ্ড বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করবেন।’

ইকবাল করিম ভূঁইয়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে দুই মিনিট করে বক্তব্য রাখেন পাঁচজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা। তারা হলেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জামিল ডি আহসান বীর প্রতীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মো. আজিজুর রহমান বীর উত্তম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার, সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাহিদুল আনাম খান।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে নামা সেনাবাহিনীর বর্তমান প্রধান একদিন আগেই সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে ‘অফিসার্স অ্যাড্রেসে’ দেওয়া বক্তব্যে সেনাসদস্যদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ জামান।

যেকোনও পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনা সদস্যদের প্রতি নির্দেশ দেন সেনাপ্রধান।

তিনি আরও বলেছিলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের জনগণের আস্থার প্রতীক। জনগণের স্বার্থে এবং রাষ্ট্রের যেকোনও প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.