সবারবেলায় সত্য বলি

নীতিগত অনুমোদন পেল ৮ ডি‌জিটাল ব্যাংক

সরকার চলমান মেয়াদের একেবারে শেষ দিকে আরও ৮টি ডি‌জিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। এরই মধ্যে দুটি ব্যাংকে লেটার অব ইনটেন্ট বা সম্মতিপত্র (এলওআই) দেয়া হয়েছে। বাকি ছয়টিকেও পর্যায়ক্রমে এলওআই দেওয়া হবে।

রোববার (২২ অক্টোবর) গভর্নর আব্দুল রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন এ ডিজিটাল ব্যাংক অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় অর্থ সচিবসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী সাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মোহাম্মদ নাসের, এ কে এম সাজেদুর রহমান খান, নুরুন্নাহারসহ প্রধান অর্থনীতিবিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।

বর্তমানে দেশে প্রচলিত ধারার ব্যাংক আছে ৬১টি। এর মধ্যে তফসিলি ব্যাংক হিসেবে অনুমোদন পাওয়া বিশেষ আইনে গঠিত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকসহ মোট ১৫টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে বর্তমান সরকারের টানা তিন মেয়াদে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, নীতিগত সম্মতি পাওয়া ডি‌জিটাল ব্যাংক দুটি হলো— নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি ও কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি। এছাড়া আরও তিনটি ব্যাংককে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো— বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, ব্যাংক এশিয়ার ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি ও ডি‌জি টেন ব্যাংক পিএলসি। ব্যাংক খাতের প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তারা ডি‌জিটাল ব্যাংকিং উইং খুলে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।

এর মধ্যে ডি‌জি টেন ব্যাংক হচ্ছে ১০টি ব্যাংকের ডিজিটাল জোট। ব্যাংকগুলো হলো— সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংক।

এর বাইরে আরও তিনটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো— স্মার্ট ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, জাপান বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি ও নর্থ-ইস্ট ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি। এই ব্যাংক তিনটিকে ৬ মাস পর এলওআই দেওয়া হবে।

মো. মেজবাউল হক জানান, ৫২টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল। তিনটি কমিটি এগুলোর কার্যক্রম মূল্যায়ন করেছে। আবেদনকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোকে টেকনোলজি, সিকিউরিটিসহ আরও কিছু বিষয় মিলে ১০০ স্কোর ধরে মূল্যায়ন করা হয়। এর মধ্যে যারা ৬০-এর বেশি স্কোর পেয়েছে তাদের মধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে নেওয়া হলেও ইন্স্যুরেন্সের একটিকে পরে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। বাকি অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৩টি ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ও পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের বাইরের। এর মধ্যে প্রথমে দু‌টিকে এলওআই দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি ছয়টিও পাবে।

অর্থনীতির চাহিদার তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হওয়া সত্ত্বেও গত জুনের মাঝামাঝি সময়ে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে ডিজিটাল ব্যাংক চালুর ঘোষণা দেন। জুনের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের লাইসেন্সের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়। ১৭ আগস্ট ছিল আবেদনের শেষ দিন। ওই দিন পর্যন্ত ৫২টি আবেদন জমা পড়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ১২৫ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকার শর্ত আরোপ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ৫০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকতে হয়।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশে ডিজিটাল ব্যাংকের একটি প্রধান কার্যালয় থাকবে। এ কার্যালয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ও সাপোর্ট স্টাফদের দপ্তর হিসেবে ব্যবহার হবে। পাশাপাশি সশরীরে বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে গ্রাহকের অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির কাজটি এ কেন্দ্রীয় দপ্তরে হবে। কিন্তু ডিজিটাল ব্যাংকগুলো প্রচলিত ব্যাংকের মতো সরাসরি কাউন্টারে গ্রাহকদের লেনদেনসেবা দিতে পারবে না। এ ব্যাংকের নিজস্ব কোনো শাখা, উপশাখা, এজেন্ট বা উইন্ডো থাকবে না। এমনকি নিজস্ব কোনো এটিএম, সিডিএম, সিআরএম বা স্পর্শযোগ্য ইনস্ট্রুমেন্ট থাকতে পারবে না।

ডিজিটাল ব্যাংকে কেওয়াইসি পরিপালন করে গ্রাহক অনলাইনে হিসাব খুলবেন। হিসাব খোলার পর গ্রাহক ভিন্ন কোনো ব্যাংক বা এমএফএস এজেন্ট, এটিএম বুথ, সিডিএম, সিআরএম নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অনলাইনে অর্থ স্থানান্তর ও ব্যবহার করতে পারবেন। একই পদ্ধতিতে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা যাবে। লেনদেন সহজ করতে ডিজিটাল ব্যাংক ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড বা অন্য কোনো অগ্রসরমাণ প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য চালু করতে পারবে। এ ব্যাংকের মাধ্যমে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, শিক্ষার্থীদের বেতন, সার্ভিস চার্জ, ট্রেজারি চালানসহ সরকারি বিভিন্ন ফি পরিশোধ করা যাবে। যদিও বর্তমানে দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকেই এ ধরনের সেবা চালু রয়েছে।

উল্লেখ্য, ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে আবেদন করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তফসিলি ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (এমএফএস), মোবাইল অপারেটর, স্টার্টআপ কোম্পানি, গ্যাস পাম্প কোম্পানি, ওষুধ কোম্পানি, ঢেউ শিট উৎপাদনকারী কোম্পানিও ছিল বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

এসআই/আজকের বেলা
আজকের বেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

Get real time updates directly on you device, subscribe now.