সবারবেলায় সত্য বলি

মিয়ানমারে গোলাগুলি, আতঙ্ক বাংলাদেশে

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সাথে সে দেশের আরকান আর্মির গোলাগুলি চলছে। এতে আহত হচ্ছেন দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যরা। গুলিবিদ্ধও হচ্ছেন অনেকে। প্রাণ রক্ষায় সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছেন বিজিপি সদস্যরা।

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের ১৪ সদস্য বাংলাদেশের ঢুকে পড়ে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের তুমব্রু এলাকার বিজিবি ক্যাম্পে তারা আশ্রয় নেন তারা। যদিও বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, তাদের শিগগিরই দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ সূত্র জানিয়েছে, সারাদিনই মিয়ানমার সীমান্ত থেকে বিজিপি সদস্যরা বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নিচ্ছেন। তারা আসা-যাওয়ার মধ্যেই আছেন। তবে এ নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

বিজিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছে অর্ধশতাধিক মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের সদস্য। তাদের মধ্যে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ আছেন।

৩৪ বিজিবির সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মাশরুকি বলেন, সারাদিনই সীমান্তে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে বিজিপি সদস্যরা আসছেন। তারা মূলত আসা যাওয়ার মধ্যেই আছেন। আমরা আমাদের সিকিউরিটি নিয়ে সতর্ক অবস্থায় আছি।

আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্যদের অস্ত্র ও গুলি বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছে জমা রাখা আছে। এ নিয়ে পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবে বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়ন।

এদিকে মিয়ানমারের গোলাগুলিতে তিন বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ।

মিয়ানমান সীমান্তে সংঘাতের কারণে বাংলাদেশের পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ও সীমান্তবর্তী কয়েকটি সড়কের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার ঘোষণা দিয়েছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে গোলা নিক্ষেপ ও গোলাগুলির কারণে স্থানীয় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন।

নাইক্ষ্যংছড়ির কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ভেতরে শনিবার রাতে শুরু হওয়া গোলাগুলি আজ রবিবার বিকেল পর্যন্ত চলছিল। বিরামহীন গোলাগুলির ঘটনায় ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, কোণারপাড়া, ভাজাবনিয়া, বাইশফাঁড়ি এলাকার শত শত পরিবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। মিয়ানমার থেকে আসা গুলিতে তুমব্রুতে একজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বাইশফাঁড়ি সীমান্তে এক ব্যক্তির বাড়িতে গোলা এসে পড়ে আগুন ধরেছে।

ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি মারাত্বক। সীমান্ত ঘেষে সংঘর্ষ চলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরাও।

সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিয়ানমারের ভেতরে ভয়াবহ গোলাগুলির কারণে তারা আত্মরক্ষার্থে বাংলাদেশে ঢুকেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। যাতে তারা এদের নিয়ে যান।’

সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কোনোভাবেই কেউ আমাদের সীমানায় অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা খুব সতর্ক রয়েছি। যুদ্ধ কতদিন চলে আমরা জানি না। কিন্তু সীমান্ত পার হয়ে কাউকে আসতে দেবো না। বিজিবিকে আমরা সেই নির্দেশনাটাই দিয়েছি।’

এসআই/আজকের বেলা
আজকের বেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

Get real time updates directly on you device, subscribe now.