সবারবেলায় সত্য বলি

চট্টগ্রামে ৩ জন নিহত, আর্তচিৎকারে মেডিকেলের পরিবেশ ভারী

চট্টগ্রামে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৬৫ জনেরও বেশি আহত শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে।

আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা এমনই করুণ যে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। নিহত তিনজনের মধ্যে একজন চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এবং অন্য দুজনের একজন একটি ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী। পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত অপর একজনের বিস্তারিত পরিচয় মেলেনি।

এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দুই অস্ত্রধারীকে ধরে গণপিটুনি দিয়েছে। এদের অবস্থাও গুরুতর বলে জানা গেছে। আহত শিক্ষার্থীদের আর্তচিৎকারে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ভ্যানগাড়ির মধ্যে মালামালের বস্তা নেওয়ার মতো করে একের পর এক আহত শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা হচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে জরুরি বিভাগে ডাক্তার ও নার্সরা হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসা ছাড়াই গুরুতর আহত অনেক শিক্ষার্থীকে ভ্যানের ওপর পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আহত শিক্ষার্থীদের স্বজনদের ভিড়ে চিকিৎসাও ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত নার্সরা।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেলা তিনটার পর থেকে চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর-মুরাদপুর এলাকায় গুলি ছুঁড়ে তিনজনকে হত্যা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

chittagong quota protest1

জানা গেছে, মুরাদপুরে সংঘর্ষে নিহত ওয়াসিম আকরাম (২২) চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়ায়। অন্যদিকে ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী ফারুকের (৩২) বাড়ি নোয়াখালীতে। মুরাদপুরের বিসমিল্লাহ হোটেলে নাস্তা করে বের হতেই একটি গুলি ওড়ে এসে তার বুক বিদীর্ণ করে চলে যায়। সেখানেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

এছাড়া মৃত অবস্থায় আরও একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়েছে। ২৪ বছর বয়সী ওই যুবকের নাম ফিরোজ বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তিনি পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া আরও একজনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে— এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশেক বলেন, ‘তিনজনের বাইরে আমরা আর কোনো লাশ এখন পর্যন্ত পাইনি।’

চট্টগ্রাম মেডিকেলের বারান্দায় বসে নিহত ওয়াসিমের বন্ধু আবির বলেন, ‘আমরা চারজন আজকে সকালে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবার জন্য মুরাদপুরে চলে আসি। সেখান থেকে আমরা চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। বেলা চারটার দিকে তখন আমাদের পাশ দিয়ে যাওয়া ছাত্রলীগের মিছিল থেকে গুলি করা হয়। সেখানেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ওয়াসিম। পরে মেডিকেলে আনলে ডাক্তার মৃত বলে জানায়।’

চট্টগ্রাম মেডিকেলে ছুটে আসা নিহত ফারুকের স্ত্রী সীমা আক্তার আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আমার স্বামী সকালে নাস্তা খেয়ে বের হয়েছে। যাওয়ার সময় বলেছে রাতে মুরগি কিনে নিয়ে যাবে। আজকে রাতে দুই বাচ্চার সাথে মুরগির তরকারি দিয়ে রাতে ভাত খাবে। সেই খাবার কই থেকে খাবে আমার বাচ্চারা?’

এর আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর রেলস্টেশনে কর্মসূচি ঘোষণা করে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তার আগেই পুলিশের সহায়তায় সেখানে অবস্থান নেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একদল নেতাকর্মী।

এসআই/আজকের বেলা

Get real time updates directly on you device, subscribe now.