আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনি প্রচারের শুরু থেকে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষ এবং হুমকি-ধমকির ঘটনা ঘটছে। গত ৫ দিনে ৩৬টির বেশি স্থানে হামলা ও সংঘর্ষ হয়েছে। বেশির ভাগ জায়গায় হামলা হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মীদের ওপর।
আওয়ামী লীগের যেসব প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ বা চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ৫২ জন বর্তমান সংসদ সদস্য। এছাড়া ২৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির ৯ প্রার্থীকেও শোকজ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে নির্বাচন উন্মুক্ত করছেন তারা। এ জন্যই এবার দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হতে বাধা দেওয়া হয়নি। কিন্তু গত পাঁচ দিনে যেভাবে নেতাকর্মীদের মধ্যে যুদ্ধে নেমেছে তা নিয়ে বিরক্ত কেন্দ্র। এ নিয়ে রোববার (২৪ ডিসেম্বর) বৈঠকে বসবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। দু-একদিনের মধ্যে কঠোর নির্দেশনা যেতে পারে তৃণমূলে। ইতোমধ্যে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা স্পষ্টত বার্তা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সংঘাত মারামারি কোনো কিছু আমি দেখতে চাই না। আমার দলের যদি কেউ করে তার কিন্তু রেহাই নেই। সাথে সাথে ব্যবস্থা নেবো। আমরা চাই, জনগণ তার ভোটধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগ করবে। যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে, সে জয়ী হয়ে আসবে। প্রার্থীরা স্বাধীনভাবে প্রচারণা চালাবে। জনগণকে সুযোগ দিতে হবে। তারা পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিবে। তাতেই আমাদের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে।’
দলীয় প্রধানের এই কড়া বার্তার পরও গত দু’দিনে হামলা, হুমকি-ধমকির রেশ টানতে পারেনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্র।
নির্বাচনি প্রচারণার প্রথম পাঁচ দিনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে সহিংসতা হয়েছে। এতে নির্বাচনি প্রচারণার আমেজ নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ ভোটারদের।
তারা জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় সব প্রার্থীই শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছিলেন। এখন প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায় তাদের কর্মীরা পরস্পরকে আক্রমণ ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন।
ভোটাররা জানান, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যেই অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ শুক্রবার বিকেলে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ইউনিয়নে প্রচারণা চালাতে গেলে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের এক কর্মী প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন আজকের বেলাকে বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে রোববার বৈঠকে বসবেন দলের দায়িত্বশীল নেতারা। এখান থেকে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক করার নির্দেশনা কঠোরভাবে মনে করিয়ে দেওয়া হবে।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আজকের বেলাকে বলেন, দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের, বিশেষ করে যারা নির্বাচন করছেন তাদের নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলা উচিত। এ নিয়ে দলের নির্দেশনা আগে থেকেই আছে। আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে আমাদের যে প্রত্যয় সেটি বারবার জানানো হচ্ছে।
ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য এখন মাঠে আছেন প্রায় ৮০০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া ‘ভোটপূর্ব অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত’ করার জন্য জুডিশিয়াল (বিচারিক) ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে প্রতিটি আসনে একটি করে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি রয়েছে। তারাও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করতে পারে। তবে তারা নিজেরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিটিগুলো ইসিকে সুপারিশ করতে পারে।