সবারবেলায় সত্য বলি

রায় পেয়েছেন শাহাদাত, মেয়রের চেয়ার কি পাবেন?

বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেনকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করেছে আদালত। তিন বছর আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে হেরেছিলেন তিনি। মেয়র হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী।

সেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছিলেন শাহাদাত। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মঙ্গলবার সেই মামলার রায় দিয়েছেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ খাইরুল আমীন। রায়ে আগামী ১০ দিনের মধ্যে শাহাদাতকে মেয়র ঘোষণার গেজেট প্রকাশের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু এমন এক সময়ে পক্ষে রায় পেলেন শাহাদাত, যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সব মেয়র, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের বরখাস্ত করেছে।

ফলে আদালতের রায় পেলেও এখন তার মেয়রের চেয়ারে বসা হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। তা স্পষ্ট হচ্ছে না স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কথায়ও।

এই রায়ের বিরুদ্ধে রেজাউল করিমের আপিলের সুযোগ রয়েছে। তিনি তা করবেন কি-না, তাও জানা যায়নি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি অপ্রকাশ্যে রয়েছেন। অন্যদিকে শাহাদাত হোসেন এই রায় মেনে তাকে মেয়রের দায়িত্ব দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ভোটে কী হয়েছিল

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি। সেই নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ছিলেন রেজাউল। বিএনপি প্রার্থী করেছিল পেশায় চিকিৎসক শাহাদাতকে। তিনি তখন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন।

সেই নির্বাচনে রেজাউল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। শাহাদাত পেয়েছিলেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। ভোটের এক মাস পর ২৪ ফেব্রুয়ারি শাহাদাত কারচুপির অভিযোগ তুলে সেই ফলাফল বাতিল চেয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।

মামলায় কী ছিল অভিযোগ

শাহাদাতের মামলার অভিযোগ করা হয়, ২০২১ সালের সিটি মেয়র নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর থেকে সিটি করপোশেনের কর্মকর্তারা রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছিলেন। এ থেকে বোঝা যায় নির্বাচনের নামে ওই দিন শুধু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। যে কারণে নির্বাচনে ভোটের হিসাব চেয়েও পাওয়া যায়নি। কোনও কেন্দ্র থেকে ইভিএমের প্রিন্ট কপি দেওয়া হয়নি।

ভোটের দিন দুপুর পর্যন্ত ৪ থেকে ৬ শতাংশ ভোট পড়লেও দিন শেষে ভোটের হার ২২ শতাংশ দেখানো হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, এতে জালিয়াতি হয়েছে।

মামলায় বিবাদী করা হয়েছিল রেজাউল করিম চৌধুরী, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান, নির্বাচন কমিশনারের সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, আবুল মনজুর, এম এ মতিন, খোকন চৌধুরী, মুহাম্মাদ ওয়াহেদ মুরাদ, মো. জান্নাতুল ইসলামকে।

মঙ্গলবারের শুনানিতে বিবাদীদের পক্ষে আদালতে কোনও আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। এত বছর সেই মামলা শুনানি ছাড়াই পড়েছিল আদালতে। রেজাউলও মেয়র হিসাবে শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন।

রেজাউলও নেই, আছে প্রশাসক

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটার পর দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সংসদ বিলুপ্তির পর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিরাও বরখাস্ত হন।

গত ১৯ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউলকেও অপসারণ করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। সিটি কর্পোরেশনে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম চালানোর জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয় তারপর।

শাহাদাতের প্রতিক্রিয়া

রায়ের পর শাহাদাত সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে সারাদেশের গণতান্ত্রিক মানুষের আইনের শাসনের প্রতি যে অনাস্থা তৈরি হয়েছিল, তা ফিরে আসতে শুরু করবে। একইসাথে চট্টগ্রামের ২০ লাখ ভোটার, যারা বার বার প্রতারিত হয়েছিল, তারাও খুশি হয়েছে। অবিলম্বে আদালতের রায় কার্যকর করতে নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।

এখন কী হবে

এই রায়ের পর দেশের সবগুলো সিটি করপোরেশনের মেয়র, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, এমনকি পৌর মেয়র যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে গেছেন এবং নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন, তাদের ভাগ্য খুলতে পারে। অনেকে পুরনো মামলা সচলের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেছেন।

যদি আদালতের নির্দেশনা মেনে স্থানীয় সরকার বিভাগ শাহাদাতকে মেয়র ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেও, তা কতদিনের জন্য, তা স্পষ্ট নয়।

সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ হচ্ছে পাঁচ বছর। সে হিসাবে ইতোমধ্যেই তিন বছর আট মাস শেষ। বাকি থাকে এক বছর ৪ মাস। ফলে তিনি আগামী কত মাসের জন্য মেয়রের দায়িত্বে আসতে পারেন, তা স্পষ্ট হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব শফিউল আজিম আজকের বেলাকে বলেন, এখনও রায়টি হাতে পাইনি। অফিসিয়ালি রায়টা হাতে পেলে তারপর বুঝতে পারব।

যেহেতু সরকার সব মেয়রকে বাদ দিয়েছে, সেক্ষেত্রে শাহাদাত কি মেয়রের আসনে বসতে পারবেন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা অন্য জিনিস। তবে রায়টা আগে আসুক, তারপর ডিটেইলস দেখে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের সঙ্গে যোগোযোগ করলেও তার মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া স্থানীয় সরকারে সচিবের আবু হেনা মোরশেদ জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টার করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আইন অধিশাখার যুগ্ম সচিব ওয়াহেদুর রহমান আজকের বেলাকে বলেন, আমি তো জানি না আসলে। মামলা মোকদ্দমা হলে আইনজীবী দ্বারা পরিচালিত করি। আমি আসলে শুধু মামলা ম্যানেজমেন্ট দেখি।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা পবন চৌধুরী এ বিষয়ে স্পষ্ট হতে অপেক্ষার করতে বললেও তার কথায় ইঙ্গিত মিলছে, মেয়রের চেয়ারে শাহদাতের আপাতত বসা হচ্ছে না।

তিনি আজকের বেলাকে বলেন, ‘আপিলও তো হতে পারে …. উচ্চ আদালতে আসবে। দেখা যাক না, রায়টা আগে আসুক।’

তাহলে কি শাহাদাত মেয়রের পদ পাবেন না— এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা তো সিটি করপোরেশনের মেয়রদেরকে অপসারণ করছি। এটা (এই রায়ে) মনে হয় খুব বেশি সুবিধা হবে না।

এসআই/আজকের বেলা
আজকের বেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

Get real time updates directly on you device, subscribe now.