কোটা নিয়ে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে বলে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবি ও বক্তব্য সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিরোধী।
শনিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোটার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। একটা কুচক্রী মহল কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেন, ‘গেল কয়েকটি বছরে কোটা না থাকায় নারীদের অংশগ্রহণ হতাশাজনক। পিছিয়ে পড়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনা সম্পর্কিত সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সকল নাগরিকের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র। সেখানে আরও বলা হয়েছে, মানুষে মানুষের সামাজিক অর্থনৈতিক অসাম্যঞ্জস্য নিরোধের জন্য নাগরিকদের মধ্যে সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমান সুযোগ- সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সংবিধানে বলা হয়েছে, জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অথচ গত কয়েক বছরে সরকারি চাকরিতে মেয়েদের অন্তর্ভুক্তি হতাশাজনকভাবে কমেছে।’
‘কোটা না থাকায় পুলিশে মাত্র চার জন নারী অফিসার সুযোগ পেয়েছে, ফরেন সার্ভিসে সুযোগ পেয়েছে দুজন মাত্র। ৫০টি জেলায় নারীরা ক্যাডার সার্ভিসে যোগদানের সুযোগ পায়নি। ২৩টি জেলায় একজনও পুলিশে চাকরি পায়নি। সংবিধানের উল্লেখিত বিধানের উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে সরকারি চাকরিসহ সকল ক্ষেত্র সবাই যেন সমানভাগে সুযোগ পায় রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে। সেজন্যই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিসিএস পরীক্ষায় মেধা তালিকায় নিয়োগ প্রায় ৭০ শতাংশের মতো। ৩৩, ৩৪, ৩৫ এই তিনটি বিসিএসে ৭২ শতাংশ প্রার্থীকে মেধার ভিক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যেখানে কোটায় নিয়োগ পেয়েছে ২৮ শতাংশ। শূন্য পদগুলোতে মেধা তালিকা থেকে নেওয়া হয়েছে। কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে যেখানে মেধা তালিকা থেকে পূরণ করা হচ্ছে সেখানে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই।’
‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই কোটার ভিক্তিতে সবচেয়ে কম নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে কোটায় ভারতে ৬০ শতাংশ, পাকিস্তানে ৯২.৫ শতাংশ, নেপালে ৪৫ শতাংশ, শ্রিলংকায় ৫০ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় আমাদের আর্থ সামাজিক বাস্তবতায় কোটার প্রয়োজন রয়েছে।’
কোটাবিরোধীতায় অশুভ শক্তি নেমেছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিদ্যমান অন্তর্ভুক্তি, এটা যৌক্তিক। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পুঁজি করে একটি কুচক্রি মহল, রাষ্ট্রকে অস্থির করার ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে, ২০১৮ সালে যখন কোটাবিরোধী আন্দোলন হয়, তখন এই রাজনৈতিকভাবে পরাজিত অশুভ শক্তি কোটার ওপর ভর করেছিল এবং সড়কে যে আন্দোলনে ভর করে রাজনৈতিক রূপ নেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে। তখন এই অশুভ শক্তির হাতে আমাদের ধানমন্ডি পার্টি অফিসও আক্রন্ত হয়েছে। ওই মহলটি রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অকার্যকর করার জন্য এবং এদের ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ মনোভাব তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুতের চেষ্টা করেছিলো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তারুণ্যের শক্তিতে আস্থা রাখি। আমরা বিশ্বাস করি, ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে সমান সুযোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন।’
সংবাদ সম্মেলনের আগে পেনশন নিয়ে আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি আকতারুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর নিজামুল হক ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ১৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় দেশের ১৫টি জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, এসব মানুষের পাশে সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মীরা সহযোগিতা করছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন্নাহার চাপা, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কবি কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।