দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার সাথে সাথে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটের ক্ষণগণনা। তফসিল ঘোষণা করতে গিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করে আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান সিইসি।
এর পরপরই তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও দেশবাসীকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। দলটি টানা চতুর্থবারের মতো নৌকার নিরঙ্কুশ জয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্বাদশের এই ভোটযুদ্ধে সামিল হওয়ার প্রত্যয়ও জানিয়েছে।
তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই আওয়ামী লীগ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল। তফসিল ঘোষণার পর এখন সেসব প্রস্তুতি কেবল শেষ করার পালা। ইতোমধ্যে দল থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে— ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হবে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের মধ্য দিয়ে।
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে চেয়ারম্যান এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সদস্য সচিব করে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনের বিভিন্ন কাজের জন্য ১৪টি উপকমিটিও পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। ১৭ নভেম্বর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা কার্যালয়ে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাও হবে।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে সরাসরি দেওয়া ভাষণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তফসিল প্রত্যাখান করে হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আহ্বান করেছে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে সারাদেশে আনন্দ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ।
আজ থেকেই ‘নির্বাচন-যুদ্ধ’
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন অর্থাৎ আজ বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) থেকেই ‘নির্বাচন-যুদ্ধে’ ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতিও গুছিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি বিএনপিসহ তার মিত্রদের আন্দোলনের নামে রাজনৈতিক সহিংসতা-নৈরাজ্য মোকাবিলার কর্মসূচি আরও জোরদারের পরিকল্পনাও হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনের মাঠে অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। এ অবস্থা ধরে রেখে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত সময় পার করতে কোনো সমস্যা হবে না। তারপরও আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে গুরুতর নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির আশঙ্কা থেকে নির্বাচনি প্রস্তুতির পাশাপাশি নেতাকর্মীকে চলমান প্রতিরোধ কর্মসূচি আরও জোরদার করতে বলা হয়েছে।
বিএনপি নির্বাচনে না এলেও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার লক্ষ্যে ছোট-বড় রাজনৈতিক জোট ও দলগুলোকে নির্বাচনে আসার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিএনপিবিহীন নির্বাচন হলে ভোটার উপস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব যেন না পড়ে, সে লক্ষ্যে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভোটের শান্তিপূর্ণ পরিবেশের ব্যাপারে লক্ষ্য রেখে দলীয় প্রচার-প্রচারণায় সময় পার করবে দলটি।
এদিকে তফশিল ঘোষণার পর শেখ হাসিনা সিলেট থেকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচার শুরু করবেন। এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পাশাপাশি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানও মনোনয়ন দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী সশরীরে নির্বাচনি জনসভায় অংশগ্রহণ ছাড়াও কয়েকটি জেলায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে দলের পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেবেন, সেই জেলাগুলো চূড়ান্ত করা হবে বৈঠকে।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সার্বিক নির্বাচনি কার্যক্রম চলবে। দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমাদানের লক্ষে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য দুটি করে এবং বাকি ছয়টি বিভাগের জন্য একটি করে মোট ১০টি বুথ থাকবে। পাশাপাশি এবারই প্রথম অনলাইনে ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার প্রক্রিয়াও চালু করবে আওয়ামী লীগ।
এ ছাড়া ধানমন্ডির কার্যালয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের নেতৃত্বে দলের ওয়েব টিম ছাড়াও আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের ইশতেহার
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকারে ইশতেহারের খসড়া প্রণয়নের কাজ চলছে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির হাত ধরে। খসড়া ইশতেহার প্রণয়ন শেষে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের অনুমোদনের পর ভোটের কয়েকদিন আগে ইশতেহার ঘোষণা করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সমন্বয়ক অ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘সিইসি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন। আমরা স্বাগত জানাই। আজকের দিনটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী নির্বাচনেও জনগণ তাদের পবিত্র আমানতের প্রতিফলন ঘটিয়ে নৌকার বিজয়যাত্রা অব্যাহত রাখবেন।’
বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে নানক বলেন, ‘তারা নির্বাচন বানচালের নামে দেশে যদি সন্ত্রাস-নৈরাজ্য চালাতে চায়, তাহলে দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সমুচিত জবাব পাবে। আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি রাজপথে আজ থেকে অতীতের মতো নির্বাচন অবধি জনগণের সতর্ক পাহারাদার হিসাবে মাঠে থাকবে।’