আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে বিপুল সংখ্যায় আওয়ামী লীগের নেতা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হতে পারেন। এ অবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে দলও কঠোর হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা।
কারণ হিসেবে তাঁরা বলেছেন— বিএনপি ভোটে আসবে না, এটি ধরে নিয়েই ক্ষমতাসীনেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন দেখাতে চাইছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাতে কেউ জিততে না পারেন, এমন বার্তাও দেওয়া হয়েছে দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে। এর সঙ্গে রয়েছে ভোটারের বেশি উপস্থিতির প্রত্যাশা।
যদিও দলের মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে বিদ্রোহী কাউকে প্রকাশ্যে সমর্থন করতে পারে না আওয়ামী লীগ। তবে কোথাও কোথাও এবার বিদ্রোহীদের ব্যাপারে শিথিলতা দেখানো হতে পারে বলে দলটির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লক্ষ্য নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তোলা, ভোট উৎসবমুখর করা ও কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করে তুলতে একাধিক বিকল্পের একটি হলো মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখা।
সম্ভাব্য স্বতন্ত্রদের সম্পর্কে খোঁজ রাখা হচ্ছে
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি গঠনতন্ত্রে উল্লেখ আছে। ফলে কেউ দলীয় পদধারী বিদ্রোহী প্রার্থী হলে সাময়িক বহিষ্কার করা হবে। তবে এবার কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বিদ্রোহীদের মাঠছাড়া করতে বাড়তি কোনো চেষ্টা চালানো হবে না। এছাড়া বিএনপি বা অন্য দল ছেড়ে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাইলে তাঁকে স্বাগত জানানো হবে।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া শেষ হবে আজ মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর)। সোমবার পর্যন্ত ফরম বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ১৯টি। শেষ পর্যন্ত এবার প্রতিটি আসনের বিপরীতে আগ্রহী প্রার্থীর সংখ্যা ১৬-১৭ জনে দাঁড়াতে পারে বলে ধারণা করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তাঁরা ধরে নিয়েছেন, মনোনয়নবঞ্চিতদের অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করতে পারেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, দলের পদধারী কেউ স্বতন্ত্র দাঁড়ালে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পদধারী না হলে দলের কী করার আছে? তিনি বলেন, এবার বিএনপিসহ অন্য দল থেকে অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন জেলায় সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কারা হতে পারে, এই বিষয়ে খোঁজখবর রাখছে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কোনো আসনে স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চাইলে তাঁকে বিরক্ত না করার প্রাথমিক পরিকল্পনা আছে ক্ষমতাসীনদের। তবে এর অর্থ এই নয় যে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা কিংবা জোটের কোনো শীর্ষ নেতার আসনে স্বতন্ত্র হলে মেনে নেওয়া হবে। বিএনপি অধ্যুষিত কোনো এলাকায় ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখার চিন্তাও রয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার মতে, আওয়ামী লীগের পদধারীদের স্বতন্ত্র নির্বাচন না করাই ভালো। বরং আওয়ামী লীগ পরিবারের কিন্তু সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন, এমন ব্যক্তিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গুরুত্ব পেতে পারেন। ব্যবসায়ী ও তারকারা কেউ স্বতন্ত্র হলেও ভালো। তবে অন্য দল ছেড়ে যাঁরা আসবেন, তাঁদের বেশি স্বাগত জানানো হবে। নিজ দলের হলে স্বাগত জানানো হবে না। আবার চাপও দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, দলটি এবার ২৩০টি আসনে নিজেদের প্রার্থী দিতে চায়। বাকিগুলো সমঝোতার মাধ্যমে মিত্রদের ছেড়ে দেওয়া হবে। এবার ১৮০-২০০ আসনে জয় প্রত্যাশা করছে দলটি। বাকিগুলো স্বতন্ত্র পেলে সমস্যা নেই।
একদিকে শরিক ও মিত্রদের ছাড় দিতে হবে, অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও ভোটার উপস্থিতি দেখাতে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে শিথিলতা দেখাতে চাইছে। ফলে জটিলতাও রয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। কেউ যদি নিজেকে যোগ্য মনে করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন, তাতে তো বলার কিছু নেই। তবে দলের কেউ হলে বহিষ্কার করা হবে।