মিরসরাই ট্র্যাজেডির ১৩ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই)। ঘুরেফিরে আবারও স্মরণকালের সেই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াল স্মৃতি ফিরে আসে কান্না, আর্তনাদ আর আহাজারী হয়ে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে কারো ভাই, কারো সন্তান, কারো বন্ধু-স্বজন কিংবা প্রিয় ছাত্রদের অকালে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার দৃশ্যপট।
স্বজনের বুকফাটা আহাজারিতে এখনো ভারী হয় আবুতোরাবের আকাশ-বাতাস। এখনো গভীর রাতে আসে কান্নার রোল। স্মৃতি বলতে এখন শুধুই ছবির ফ্রেম। নারীছেঁড়া ধন ছেলেকে হারিয়ে মা-বাবা সেই ছবি বুকে আঁকড়ে ধরে আহাজারি করেন। আবার কখনো হয়ে যান নির্বাক।
জানা যায়, ২০১১ সালের ১১ জুলাই মিরসরাই উপজেলা সদরের স্টেডিয়াম থেকে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা ফুটবল খেলা দেখে বাড়ি ফেরার পথে বড়তাকিয়া-আবুতোরাব সড়কের সৈদালী এলাকায় চালকের অসতর্কতায় প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থীকে বহনকারী একটি মিনি ট্রাক উল্টে পাশ্ববর্তী ডোবায় পড়ে যায়। যেখানে ৪২ জন শিক্ষার্থীসহ মোট ৪৫টি তাজা প্রাণ ঝরে যায়। লাশের মিছিলে ভারী হয়ে ওঠে গ্রামের পর গ্রাম। শোকের জনপদে পরিণত হয়েছিল মায়ানী, আবুতোরাব, মঘাদিয়াসহ পাশ্ববর্তী ৭ গ্রাম। আজও সেই ডোবার পাশে এলেই গা শিউরে উঠে স্বজন সহপাঠী কিংবা পথচারীদের।
১১ জুলাই দিনটি মিরসরাইবাসীর কাছে অত্যান্ত বেদনাদায়ক। সারাজীবন এ দিনটিকে ভূলতে পারবে না এই জনপদের মানুষ। শুধু মিরসরাই নয়, এটি দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বেরও একটি আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয় তখন। এই জনপদের বিভীষিকাময়, বিষাদময় একটি অধ্যায়ের নাম মিরসরাই ট্র্যাজেডি।
নিহতদের স্মরণে স্বজনহারাদের সান্তনা দিতে ছুটে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম এইচ এম এরশাদ, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দৌজা চৌধুরীসহ দেশের বিশিষ্টজনেরা।
মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে উপজেলার আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৪ জন, আবুতোরাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪ জন, আবুতোরাব ফাজিল মাদরাসার ২ জন, প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের ২ জন শিক্ষার্থী নিহত হন। এছাড়া এক অভিভাবক ও দু’জন ফুটবলপ্রেমী যুবকসহ ৪৫ জনের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে রচিত হয় মিরসরাই ট্র্যাজেডি।
তবে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী নিহত হওয়া আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ফটকে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’ আর দুর্ঘটনাস্থলে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ ‘অন্তিম’।
আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মর্জিনা আক্তার আজকের বেলাকে বলেন, নিহতদের স্মরণে স্কুল প্রাঙ্গণে ছোট পরিসরে স্মরণসভার আয়োজন রয়েছে। এছাড়া স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, নিহত পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আবুতোরাব স্কুল প্রাঙ্গণে ‘আবেগ’ ও দুর্ঘটনাস্থল ‘অন্তিমে’ পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এছাড়া নিহত স্কুল শিক্ষার্থীদের স্মরণে স্থানীয় মসজিদ, মন্দির ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন রাখা হয়েছে।