সবারবেলায় সত্য বলি

বিশ্বকাপে সবার আগে বিদায় বাংলাদেশের

পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের পর আর কোনো সমীকরণেই আটকে থাকতে হচ্ছে না বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। বিশ্বকাপের সপ্তম রাউন্ডের প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের মাধ্যমে সবার আগে বাড়ি ফেরা নিশ্চিত হলো টাইগারদের। ৭ ম্যাচ শেষে পয়েন্ট মাত্র ২। তাই কাগজ-কলমে বিদায়ই বলতে হচ্ছে বিশ্বকাপকে।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) কলকাতার ‍বিখ্যাত ইডেন গার্ডেন্সে বিশ্বকাপের ৩১তম ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানের পেসারদের তোপে ৪৫.১ ওভারে মাত্র ২০৪ রানে গুটিয়ে যায় টাইগারদের ইনিংস। জবাব দিতে নেমে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশি বোলারদের পাড়ার বোলার বানিয়ে ১০৫ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নিয়েছে পাকিস্তান। এই পরাজয়ে সবার আগে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল বাংলাদেশ।

সহজ লক্ষ্য তাড়ায় এদিন শুরু থেকেই তাসকিন-শরীফুলদের ওপর চড়াও হন দুই পাক ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ফখর জামান। ২১ ওভারের মধ্যে তারা দলকে এনে দেন ১২৮ রান। ২২তম ওভারের প্রথম বলে গিয়ে উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজকে সুইপ খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন আব্দুল্লাহ শফিক। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেও লাভ হয়নি। ৬৯ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় ৬৮ রানে থামে তার ইনিংস।

দলীয় ১৬০ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় পাকিস্তান। ক্রিজে নেমে সুবিধা করতে পারেননি অধিনায়ক বাবর আজম। ১৬ বলে ৯ রান করে মিরাজকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ধরা পড়েন তিনি। অন্যদিকে পাঁচ ম্যাচ পর ফেরা ফখর ফেরেন ব্যক্তিগত ৮১ রানের ইনিংস খেলে। ৭৪ বলে ৭ ছক্কা ও ৩ চারে সাজানো ছিল তার ইনিংসটি।

শেষদিকে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ২১ বলে ২৬ ও ইফতিখার আহমেদের ১৫ বলে ১৭ রানের অপরাজিত ইনিংসে ভর করে ৩২.৩ ওভারে জয় নিশ্চিত করে পাকিস্তান। ৯ ওভার বল করে ৬০ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সফলতম বোলার মিরাজ।

টানা চার হারের পর চলতি বিশ্বকাপে জয়ের মুখ দেখলো পাকিস্তান। কিন্তু ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারল না বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে আসর শুরুর পর টানা ষষ্ঠ হার দেখলো টাইগাররা। বিশ্বকাপ ইতিহাসে একটানা এত ম্যাচ এর আগে কখনো হারেনি বাংলাদেশ।

এর আগে বিখ্যাত এই স্টেডিয়ামে টস জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমেই প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ইনিংসের পঞ্চম বলে তানজিদ তামিমকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন শাহিন আফ্রিদি। টুর্নামেন্টজুড়ে ব্যর্থ জুনিয়র তামিম ফিরেছেন শূন্য রানে, বাংলাদেশও প্রথম উইকেট হারায় কোনো রান না তুলতেই। তানজিদকে ফিরিয়ে ওডিআইতে উইকেটের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন আফ্রিদি।

খারাপ সময়ে থাকা শান্তও টেকেননি। শাহিন পরের ওভারে বল করতে এসেই ফেরান ৪ রান করা শান্তকে। শর্ট মিডউইকেটে উসামা মীর ডানদিকে ঝুঁকে দারুণ ক্যাচ তালুবন্দী করেছেন। তৃতীয় ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে ৬ রান তুলতেই দ্বিতীয় উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।

৫ ওভারে ১০ রানে দুই উইকেট হারানোর পর মুশফিকুর রহিমকে ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। ব্যর্থ তিনিও। হারিস রউফের ইনসুইং তার ব্যাটে চুমু দিয়ে জমা হয়েছে উইকেটকিপার রিজওয়ানের গ্লাভসে। বাংলাদেশের স্কোর তখন ৬ ওভারে মাত্র ২৩! ৫ রানেই শেষ হয়েছে মুশফিকের ইনিংস।

চতুর্থ উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে জুটি গড়েন লিটন। এদিন ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে পাঁচে নেমেছেন মাহমুদউল্লাহ। আস্থার প্রতিদানও দিচ্ছেন ব্যাটে। তাদের জুটিতেই ১১তম ওভার শেষে দলীয় অর্ধশতক পূর্ণ করে টাইগাররা। এরপর ১৭তম ওভারে এই জুটি পূর্ণ করে ৫০ রান। ২১তম ওভারে শতরান পূর্ণ হয় বাংলাদেশের। কিন্তু ঠিক এর পরেই বিদায় নেন লিটন।

লিটন না পারলেও অর্ধশতক ,হাঁকিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ৭০ বলে ৬ চার ও ১ ছয়ে ৫৬ রান করে শাহিনের দুর্দান্ত এক বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। এরপর ব্যাট করতে নেমে একটা ছক্কা মেরেই ওসামা মীরের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন তাওহিদ হৃদয়।

সাকিব-মিরাজ জুটি বেঁধে দলকে ২০০ এর দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সাকিব বিদায় নেন ১৮৫ রানে। বিশ্বকাপে এসে শর্ট বলে সংগ্রাম করতে হচ্ছে সাকিবকে। পাকিস্তানের বিপক্ষেও শর্ট বলে ঠিকঠাক খেলতে পারছিলেন না। তবে সময়ের সঙ্গে ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিলেন টাইগার দলপতি। কিন্তু অর্ধশতকের কাছাকাছি পৌঁছে হারিস রউফের শর্ট বলটা ঠিকমতো পুল করতে পারলেন না। সোজা ক্যাচ তুলে ধরা পড়লেন আগা সালমানের হাতে। ৬৪ বলে ৪ চারে ৪৩ রান করে আউট হন টাইগার দলপতি।

৪৪ ওভারের প্রথম বলে মোহাম্মদ ওয়াসিমের দারুণ গতির বল তুলে মারতে চেয়েছিলেন মিরাজ। কিন্তু বলে-ব্যাটে হয়নি। ৩০ বলে ১ চার ও ১ ছয়ে ২৫ রান করেন মিরাজ। মিরাজের বিদায়ের পর আর বেশিক্ষণ টেকেনি বাংলাদেশ। শেষ তিন ব্যাটারকেই ফেরান মোহাম্মদ ওয়াসিম।

এসআই/আজকের বেলা
আজকের বেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

Get real time updates directly on you device, subscribe now.