সবারবেলায় সত্য বলি

চট্টগ্রামে করোনার সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া

করোনাভাইরাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে শহরের সাতটি এলাকায় ডেঙ্গুর বিস্তার সবচেয়ে বেশি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চিকুনগুনিয়া নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ তেমন সোচ্চার নয়। সরকারি হাসপাতালে চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষাও হচ্ছে না। এই রোগের পরীক্ষার জন্য বেসরকারি হাসপাতালের উপরই ভরসা রাখতে হচ্ছে।

চিকুনগুনিয়া নিয়ে সরকারি কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বেসরকারি ল্যাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মশাবাহিত এই রোগ চট্টগ্রাম শহরে এবার ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গুর বিস্তার ছড়িয়ে পড়া সাতটি এলাকা হলো— চট্টগ্রাম বন্দর, কোতোয়ালি, ইপিজেড, হালিশহর, সদরঘাট, বাকলিয়া এবং বায়েজিদ।

চট্টগ্রাম জেলা কীটতত্ত্ববিদ মঈন উদ্দিন বলেছেন, ‘এই বর্ষায় বৃষ্টির যে ধরন, তা ডেঙ্গুর জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। তাই এই সময়কে ডেঙ্গুর পিক টাইম বলা যায়। এ কারণে সামনে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বৃষ্টি থেমে থেমে পড়ছে। এই পরিবেশে ডেঙ্গু মশা সহজেই ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে পারে। তবে ভারী বর্ষণ হয়ে পথ-ঘাট সব ধুয়ে গেলে মশা কমে যাবে। কিন্তু এখনো তেমন বৃষ্টি হয়নি। তাই ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী বাড়ছে।’ বর্তমানে বৃষ্টির যে ধরন তাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বেশি হতে পারত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষ সচেতন হওয়ার কারণে রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। তবে শহরের সাতটি এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে।’

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, গত চার বছরের মধ্যে ২০২২ সালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল। পরের বছর ২০২৩ সালে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু অনেকটা মহামারি আকার ধারণ করে। সে বছর চট্টগ্রামে ১৪ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। তবে পরের বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে রোগীর সংখ্যা কমে ৪ হাজার ৩২৩ জনে নেমে আসে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।

এ ছাড়া জানুয়ারিতে রোগী পাওয়া যায় ৭০ জন। ফেব্রুয়ারিতে ২৮, মার্চে ২২, এপ্রিলে ৩৩, মে মাসে ১১৬, জুনে ১৭৮ এবং জুলাই মাসের ১৩ তারিখ পর্যন্ত ১৬৬ জন্য রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে গত শনিবার এক দিনে ২৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। ডেঙ্গুতে চলতি বছর মোট তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে, জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ১০ জুন চট্টগ্রামে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে শহরে কিংবা গ্রামে কোথাও না কোথাও করোনা রোগী পাওয়া যাচ্ছে। ১৩ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনা রোগীর সংখ্যা ২০০ ছুঁয়েছে। এই সময়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঘটেছে ৮ জনের।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, প্রতিদিন তার কাছে যেসব রোগী আসছে তার অধিকাংশই জ্বরাক্রান্ত। তাদের বেশির ভাগই চিকুনগুনিয়া এবং ডেঙ্গু রোগী। গত রবিবার জেনারেল হাসপাতালের আউটডোরে সাতজন চিকুনগুনিয়া রোগী শনাক্ত হয়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়া নিয়ে সিভিল সার্জন অফিসের কোনো পরিসংখ্যান নেই।

৪ থেকে ১২ জুলাই বেসরকারি এপিক হাসপাতালে ১৮৫ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষায় ১৫৩ জনের চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়। অর্থাৎ আক্রান্তের হার ৮২ দশমিক ৭১ শতাংশ। এ ছাড়া পার্কভিউ হাসপাতলে ৮ থেকে ১২ জুলাই ২২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৮ জনের অর্থাৎ ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশ রোগীর চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, ‘অনেকেরই উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সবার সতর্ক ও সচেতন হওয়া জরুরি। ঘুমানোর আগে মশারি টাঙানো বাধ্যতামূলক করা উচিত। এমনকি দিনের বেলা শিশুরা ঘুমালে তাদেরকে মশারি টাঙিয়ে দেয়া উচিত।’

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চিকুনগুনিয়া রোগের ভাইরাসের প্রাথমিক বিস্তারকারী হলো মশা, এডিস ইজিপ্টি বা হলুদ জ্বর মশা। এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশের দুই থেকে চার দিনের মধ্যে জ্বর হয় এবং এর সঙ্গে শরীরে ব্যথা হয়। যা কয়েক সপ্তাহ, মাস বা বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এ ছাড়া এডিস মশার মাধ্যমে ডেঙ্গুর রোগ ছড়ায়। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.