সবারবেলায় সত্য বলি

মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতাল—পৃথিবীর আলো দেখেই মাকে চিরতরে হারাল সন্তান

মিরসরাইয়ের মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতালের ‘ভুল চিকিৎসায়’ সালমা আক্তার (২৩) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত সালমা আক্তার শুরু থেকে এই হাসপাতালে ডা. শারমিন আয়েশা আক্তারের চিকিৎসা নিয়ে আসছিল। তিনি নরমাল ডেলিভারির জন্য হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী টাকা দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চলাফেরা করেছেন।

জানা যায়, গত ১৪ মার্চ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় সালমা আক্তারের প্রসব ব্যথা উঠলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করান স্বজনরা। পরে রাত সাড়ে ১১টায় নরমাল ডেলিভারি শেষে সন্তান প্রসব করলে সালমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরে রাতে মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেফার করেন।

এরপর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। তবে জন্ম নেওয়া নবজাতক সুস্থ রয়েছে। সে নানী ও খালার কাছে রয়েছে। তার নাম রাখা হয়েছে আদনান হোসেন।

নিহত সালমা উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের সাহেবদি নগর গ্রামের ইদ্র্রিস মিয়ার বাড়ির কুয়েত প্রবাসী নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী। এই দম্পত্তির নাজমিন সুহানা নামের ৬ বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

সালমার বোন সানজিদা আক্তার আজকের বেলাকে বলেন, “আমার বোনের মতো আর কারো ক্ষতি যেন না করে মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতাল। শুরু থেকে এই হাসপাতালের ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা করে আসছিল সে। মৃত্যুর পরে জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মাসুদ বলে ‘আমার বোনের জরায়ুতে টিউমার থাকায় মৃত্যু হয়েছে’। টিউমার যদি থাকতো তারা আগে বলেনি কেনো? এতবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করিয়েছে এই হাসপাতালে। শুরু থেকেই ডা. শারমিন আয়েশা আক্তারের চিকিৎসা নিয়েছিল সে। সন্তান ডেলিভারির পরে কেনো বলতেছে এ কথা?”

কান্নাজড়িত কন্ঠে সালমার মা আকলিমা বেগম বলেন, “সন্তান প্রসবের পরে আমার মেয়ে আমাকে জানালা দিয়ে ডাকতেছে। হাসপাতালের লোকজন ঢুকতেই দেয়নাই। তাদের গাফিলতির কারণে আমার মেয়েকে হারালাম। আমার সদ্য জন্ম নেওয়া নাতি ও ৬ বছরের সুহানা এতিম হয়ে গেল। মেয়ের মৃত্যুর পরে হাসপাতালের পরিচালক মাসুদকে জিজ্ঞেস করলে উনি আমাকে বলতেছে ‘নো সাউন্ড, কোনো কথা নাই’। আমি আমার মেয়ের মৃত্যুর বিচার চাই।”

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মো. মাসুদ রানা আজকের বেলা বলেন, ‘আমার হাসপাতালে মারা যায়নি। চমেক হাসপাতালে মারা গেছে। সাড়ে ১১টায় নরমাল ডেলিভারি হয় এই রোগীর। পরে ব্লিডিং দেখে আমরা সেলাই দিয়ে মেডিকেলে রেফার করি।’

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন আজকের বেলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাকে কেউ জানায় নিই। ঘটনাটি আপনার কাছে শুনলাম। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী আজকের বেলাকে বলেন, এই বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পাইলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসএস/এসআই
আজকের বেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

Get real time updates directly on you device, subscribe now.