বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) স্থানীয় প্রধান সমন্বয়ক চেওসিম বমকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
রোববার (৭ এপ্রিল) ভোর ৫টায় র্যাব-১৫ বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ।
তিনি বলেন, অভিযান চলমান রয়েছে। নাথান বমের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে চেওসিম বমের। বান্দরবানের শারণ পাড়ার মৃত রোয়াল খুব বমের ছেলে চেওসিম। আমরা চেওসিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্যদের অবস্থান ও পরিকল্পনা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি।
তিনি আরও বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বান্দরবানের সুয়ালকে অভিযান পরিচালনাকালে তার বাসা চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলা হয়। তার পাকা একতলা বিল্ডিংয়ে তাকে খোঁজাখুঁজি করে পাওয়া না গেলে, তার বাসায় থাকা ছোট একটি স্টিলের স্ট্রাকচার খুঁজে পাই। তার পরিবারের সদস্যরা সেটা খুলতে অসহযোগিতা করলেও আমরা খুলে তার ভেতরে ছোট একটি কুঠুরি ছিল সেখান থেকে তাকে আটক করতে সমর্থ হই।
লেফটেনেন্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ বলেন, ২০১৪-১৫ এর দিকে ছয়টি নৃ-গোষ্ঠীকে নিয়ে কেএনডিও নামে স্যোশাল অর্গানাইজেশন গঠন করা হয়। চেওসিম বম কেএনএফের সৃষ্টির প্রথম দিকের কেএনডিও-এর চেয়ারম্যান। কেএনডিও থেকে সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কেএনএফ গঠন করে।
তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে একটি সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠনকে টাকার বিনিময়ে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের বিষয়টিও এই চেওসিম বমের বাসায় বসে আর্থিক কালেকশনগুলো করা হত। এ ছাড়া কেএনএফের নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের তার ও তার আত্মীয় স্বজনদের বাসায় রাখা হত।
এইচ এম সাজ্জাদ বলেন, ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় জড়িত কয়েকজন ঘটনার আগে তার বাসায় এসেছিল, কয়েক দিন থেকেছিল। তিনি সংগঠনের জন্য বিভিন্ন জায়গা হতে টাকা কালেকশন করতেন। অভিযানে র্যাব তার বাসা থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ দুইটি এয়ারগান জব্দ করে। পার্বত্য এলাকায় শান্তি ফিরে না আসা পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন র্যাব-১৫-এর উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ শরীফুল আহসান, কোম্পানি অধিনায়ক সিপিসি-৩ স্কোয়াড্রন লিডার তৌহিদুল মুবিন খান।
বান্দরবানের থানচি ও রুমায় কয়েক দফা সন্ত্রাসী হামলার পর সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে কম্বিং অপারেশন শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। রোববার (৭ এপ্রিল) দুপুরে বান্দরবান ৬৯ সেনা রিজিয়ন মাঠে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
সেনাপ্রধান বলেন, ইতোমধ্যে কম্বিং অপারেশন শুরু হয়েছে। বিভিন্ন বাহিনী সম্মিলিতভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অভিযানের সফলতার জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজনে সব বিষয় আমরা প্রকাশ না করলেও জনসাধারণের যেটুকু জানা প্রয়োজন আমরা তা গণমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করব।
তিনি আরও বলেন, সংগঠনটির সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের শান্তি আলোচনা চলছিল। আলোচনা চলাকালে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কোনো অভিযান পরিচালনা করিনি। তারা দুইবার শান্তি আলোচনায় বসেছে। তৃতীয়বার বসার কথা বলেছে। তাদের স্টার সানডেতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে রুমার গীর্জায় উপহার পাঠানো হয়েছে। আমরা তাদের বিশ্বাস করেছিলাম। তাদের ষড়যন্ত্র আমরা বুঝতে পারিনি।