মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রোববার (২৬ মে) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়।
জানা যায়, চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মধ্যম তালবাড়িয়া এলাকার রেললাইনের পাশে পাহাড়ের পাদদেশের মাটি ও কৃষি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করার অভিযোগে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে মামুন মেম্বারকে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
মামুন মেম্বারের অপকর্মে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী
হামলা, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে মাটি কাটা, পাহাড় কাটা, চোরাই কাঠের ব্যবসা, মামলা দিয়ে হয়রানি ও অর্থ আদায়সহ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে ইউপি সদস্য মামুন।
এলাকার এতসব অপকর্ম করতে করতে ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায়না। তার বিরুদ্ধে কথা বললে তার পালিত ক্যাডার বাহিনী তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে।
এলাকার ভুক্তভোগী প্রবাসী মো. রাসেল অভিযোগ করেন, তিনি পৈতৃক জমিতে ঘর নির্মাণকাজ শুরু করলে চাঁদা দাবি করে মামুন। চাঁদা না পেয়ে মামুন বাহিনী তার উপর হামলা চালায়।
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মিরসরাই সদর ইউনিয়নের মধ্যম তালবাড়িয়ার স্টেশন এলাকা থেকে বনবিভাগ ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে ট্রাক ভর্তি চোরাই সেগুন কাঠসহ ইউপি সদস্য মামুনকে গ্রেপ্তার করে।
সর্বশেষ চলতি বছরের বুধবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মধ্যম তালবাড়িয়া এলাকার রেললাইনের নিকটে পাহাড়ের পাদদেশের মাটি ও কৃষি জমির মাটি কেটে ইটিভাটায় সরবরাহ করার সময় মামুন মেম্বারসহ তিনজনকে আটক করা হয়। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে মামুন মেম্বারকে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বার বার জেলে যাওয়া মামুন মেম্বার প্রভাবশালী লোকদের সহযোগিতায় জামিনে বেরিয়ে আবারও অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে।
আহত প্রবাসী রাসেল এর বাবা মো. আবুল কাশেমের ভাষ্য, ‘ মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর তালবাড়িয়া জামালের দোকান এলাকায় পৈত্রিক জমিতে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করি আমি। ইউনিয়ন পরিষদের অনুমোদন ছাড়া ঘরের কাজ করা যাবে না বলে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন মামুন মেম্বার। আমি তাকে ৫০ হাজার টাকা দিই। দাবিকৃত বাকি টাকা না পেয়ে গত বছরের (৬ নভেম্বর) শনিবার ইউপি সদস্য মামুনসহ তার লোকজন আমার বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর চালায় ও নির্মাণাধীন ভবনের ক্ষতি করে।
এ ঘটনায় ওই দিন সন্ধ্যায় ইউপি সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুনসহ পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২০ জনকে আসামি করে মিরসরাই থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করলে এতে মামুন ক্ষিপ্ত হয়। মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আমার ছেলে রাসেলকে পিস্তল ও অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় নিয়ে মারধর করে। পরে স্থানীয়রা মিরসরাই থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।’
মিরসরাই সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুল আলম দিদার জানান, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন লঙ্গনের অভিযোগে মামুনকে সাময়িক বরখাস্তের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি হাতে পেয়েছি। বিষয়টি তাকে জানিয়েছি।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন বলেন, মিরসরাই সদর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন লঙ্গনের অভিযোগে তার দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিতে সমীচীন নয় এই মর্মে মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। বিষয়টি আমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবগত করেছি।