সবারবেলায় সত্য বলি

আনার হত্যা—খুনিদের সঙ্গে অর্থ লেনদেনের আলাপে ছিলেন মিন্টু

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনারকে অপহরণের মাধ্যমে হত্যার কিলিং মিশনে জড়িত ভাড়াটে খুনিদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টাকা দেওয়ার কথা ছিল মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহিনের।

আর সেই অর্থ লেনদেন হওয়ার কথা ছিল ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর মাধ্যমে। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) মিন্টুকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।

সেই আবেদনে আসামি শিমুল ভুঁইয়ার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে একথা উল্লেখ করা হয়।

এদিন বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামি শিমুল ভুঁইয়া ১৬৪ ধারায় যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন, তাতে আসামি সাইদুল করিম মিন্টুর সংশ্লিষ্টতা বর্ণিত আছে। উক্ত জবানবন্দিতে ভিকটিমকে (আনার)প্রলুব্ধ করে অপহরণ তথা হত্যা সংশ্লিষ্টতার সাথে আর্থিক লেনদেনে মিন্টুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শিমুল ভুঁইয়া উল্লেখ করেন, গত ৫/৬ মে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহিন আসামি সাইদুল করিম মিন্টুর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে এমপি আনার হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সাপেক্ষে আর্থিক লেনদেনের কথা বলেন।

আবেদনে আরও বলা হয়, পুলিশ রিমান্ডে থাকা আসামি কামাল আহমেদ বাবু গ্যাস বাবু এমপি আনার অপহরণ সংক্রান্তে সাইদুল করিম মিন্টুর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের পরে ঘাতক দলের প্রধান শিমুল ভুঁইয়ার সাথে তিনি প্রতিশ্রুত টাকা লেনদেনের বিষয়ে ডিজিটালি এবং ফিজিক্যালি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের প্রমাণস্বরূপ ছবি আদান-প্রদান করেছেন। গত ২৩ মে দাবিকৃত টাকার আংশিক মিন্টুর মাধ্যমে ঘাতক শিমুল ভুঁইয়াকে দেওয়ার কথা ছিল।

এসব তথ্যের ভিত্তিতে গত ১২ জুন রাত ৯টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর ধানমন্ডি থানাধীন জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল এলাকা হতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামি সাইদুল করিম মিন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়। মিন্টুর দেহ তল্লাশি করে তার ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল যা উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে জব্দ করা হয়। এমপি আনার অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড পরিকল্পনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি-না জানতে চাইলে মিন্টু সত্য মিথ্যার সংমিশ্রণে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেন। মামলার ঘটনার সঙ্গে আসামি মিন্টুর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করলে একেক সময় একেক রকম তথ্য দিয়েছেন তিনি।

ঘটনার অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর মিন্টু কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাই ঘটনার মূল রহস্য উদ্‌ঘাটন সাইদুল করিম মিন্টুর ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা তথা হত্যাকাণ্ড পরিকল্পনার সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কি-না তা উদ্‌ঘাটন করতে আসামিকে রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।

এর আগে গত ৬ জুন রাতে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়া এলাকা থেকে আটক করে ঢাকায় নিয়ে আসে ডিবির একটি দল। এরপর গত ৯ জুন তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এ মামলায় গত ৩ জুন আসামি শিলাস্তি রহমান, ৪ জুন তানভীর ভুঁইয়া এবং ৫ জুন সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভুঁইয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গত ২৪ মে তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন অপর একটি আদালত।

গত ২২ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের বাসায় আমরা সপরিবারে বসবাস করি। গত ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা আনোয়ারুল আজিম আনার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। গত ১১ মে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তা কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাই।

গত ১৩ মে বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপে একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। এতে লেখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি রয়েছে। আমি অমিত সাহার কাজে নিউটাউন যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। আমি পরে ফোন দেব। ’

এছাড়া আরও কয়েকটি বার্তা আসে। ক্ষুদে বার্তাগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজ করতে থাকি। কোনো সন্ধান না পেয়ে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস বাদী হয়ে ভারতীয় বারানগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপরও আমরা খোঁজাখুজি অব্যাহত রাখি।

পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে বাবাকে অপহরণ করেছে।

এসআই/আজকের বেলা
আজকের বেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

Get real time updates directly on you device, subscribe now.