চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বন্দীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় কারাগারের একাধিক কর্মকর্তা ও বোয়ালখালী থানার কয়েকজন কর্মকর্তাসহ মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে।
মঙ্গলবারর (২০ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের বিচারক ড. বেগম জেবুন্নেছার কাছে মামলার দরখাস্ত পেশ করেন নিহত রুবেলের স্ত্রী।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর পিপি অ্যাড. আবদুর রশীদ বলেন, পুলিশ ও কারাগারে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে মামলার দরখাস্তটি আদালতে পেশ করা হয়। মামলার দরখাস্তটি এখনো উপস্থাপিত হয়নি, কোনো শুনানিও হয়নি।
বাদীনির আইনজীবী অ্যাড. অজয় ধর বলেন, ভিকটিম রুবেল সুস্থ ছিলেন। তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলার দরখাস্ত পেশ করেছি। বিজ্ঞ বিচারক মামলার দরখাস্তটি দেখবেন বলেছেন। দেখে হতো একটা আদেশ দিবেন। আশা করি বাদীপক্ষ সুষ্ঠু বিচার পাবেন।
মামলা বাদীনি পুরবী পালিত বলেন, আমার স্বামীকে পুলিশ যখন নিয়ে যায় তখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। পরে দেখি তার শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন। গোপন অঙ্গেও আঘাতের চিহ্ন দেখে গেছে। আমি এখন কি করবো, তিনটা সন্তান নিয়ে। স্বামী মারা যাওয়ার ৭ দিনের মাথায় আমার আরেকটি নবজাতক হয়েছে। পরিবারের একমাত্র ভরসারস্থল ছিল আমার স্বামী। আমরা এখন কিভাবে চলবো। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
মামলার দরখাস্তের সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বোয়ালখালী এলাকার রুবেল দে-কে জানুয়ারীর ২৭ তারিখ গ্রেপ্তার করে বোয়ালখালী থানা পুলিশ। পরে রুবেলকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পরিবারের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ঘুষ দারি করে পুলিশ। অন্যথায় রুবেলকে ৫০০ লিটার চোরাই মদ দিয়ে চালান দেওয়ার হুমকি দেয় পুলিশ। পুলিশের দারি পূরণ করতে না পারায় বিভিন্নভাবে শরীরিক নির্যাতন করে ২০০ লিটার চোরাই মদ দিয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করে বোয়ালখালী থানা পুলিশ।
আত্মীয় স্বজন রুবেলকে কারাগারে দেখতে গেলে তারা তাকে দেখতে পান, হুইল চেয়ারে করে নিয়ে আসা হয়েছে রুবেলকে। দেখা যায়, রুবেলের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন। পরে রুবেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য জেল সুপারকে আদেশ প্রদানের জন্য জুডিসিয়াল আদালতে দরখাস্ত দিলে আবেদনটি মঞ্জুর করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে জেল সুপারকে নির্দেশ দেন আদালত।
পরবর্তী দিন ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টায় রুবেলের পরিবার খবর পান রুবেদ দে মারা গেছেন, তার মরদেহ চমেক মর্গে আছে। পরে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত (নিবারন) আইন ২০১৩ এর ১৫(২) ধারায় বোয়ালখালী থানার পুলিশ কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের একাধিক কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার দরখাস্তটি পেশ করেন ভিকটিম রুবেল দেয় স্ত্রী পুরবী পালিত।
মামলার আবেদনে আসামি করা হয়েছে— বোয়ালখালী থানার ওসি আছহাব উদ্দিন, ওসি তদন্ত সাইফুল ইসলাম, এসআই এসএম আবু মুসা, এসআই মাঈন উদ্দিন, এসআই সাইফুল ইসলাম, কনস্টেবল কামাল, কনস্টেবল আসাদুল্লাহ, কনস্টেবল রি যাউল জব্বার, ডিউটি অফিসার বোয়ালখালী থানা, সিনিয়র জেল সুপার মঞ্জুর হোসেন, জেলার এমরান হোসেন মিয়া, ডেপুটি জেলার নওশাদ মিয়া, আখেরুল ইসলাম, সুমাইয়া খাতুন, ইব্রাহিম ও ওয়ার্ড মাস্টার পদ্মা ১৫।