ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় অবিস্থত জমির রেজিস্ট্রেশন ব্যয় অবশেষে কমেছে। এখন থেকে এসব এলাকার জমি রেজিস্ট্রেশনের সময় আগের চেয়ে কম উৎসে আয়কর দিলে চলবে। এলাকাগুলোর বাণিজ্যিক, আবাসিক, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত এলাকার বাণিজ্যিক ও আবাসিক প্লট এবং অন্যান্য জমি— সবই এর আওতায় আসবে।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর উৎসে আয়কর কমানো সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এনবিআর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
প্রজ্ঞাপনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত জমিকে মৌজা অনুযায়ী পাঁচ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-সাধারণ বাণিজ্যিক, আবাসিক, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত এলাকায় বাণিজ্যিক ও আবাসিক প্লট এবং অন্য জমি। এই ৫ ধরনের জমি রেজিস্ট্রেশনে উৎসে কর শ্রেণিবিন্যাসও করা হয়েছে। এখন থেকে এ হিসাবে জমি বিক্রির উৎসে কর আদায় করা হবে। তবে অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকায় জমি রেজিস্ট্রেশনে আগের হারে (৬ শতাংশ) কর দিতে হবে।
গত জুলাই মাসে এনবিআর আকষ্মিকভাবে সব ধরনের জমি রেজিস্ট্রেশনে উৎসে আয় কর বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণে উন্নীত করে। রেজিস্ট্রেশন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বড় দুর্ভোগে পড়েন জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা। জমির রেজিস্ট্রেশন ব্যাপকভাবে কমে যায়। জমি বিক্রিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট সবাই বর্ধিত কর বাতিলের দাবি জানাতে থাকেন। অবশেষ সরকার বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় এ কর কমিয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ‘ক’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে-রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন বাণিজ্যিক এলাকা (জমি বা প্লট)। ‘খ’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে এসব এলাকার (ক শ্রেণিতে উল্লিখিত এলাকা) আবাসিক প্লট ও জমি। শ্রেণি-‘গ’তে রাখা হয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়, কিন্তু ডেভেলপার বা রিয়েল এস্টেট কোম্পানির প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক এলাকা। শ্রেণি-‘ঘ’তে আছে এসব স্থানের (গ শ্রেণিভুক্ত) আবাসিক এলাকা। শ্রেণি-‘ঙ’তে ক, খ, গ, ঘ শ্রেণি ব্যতীত অন্য সব এলাকা পড়েছে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগে হামলার ঘটনা ঘটলে কোনো ছাড় নয়: প্রধানমন্ত্রী
ঢাকার গুলশান, বনানী, মতিঝিল ও তেজগাঁও থানার সব মৌজার ‘ক’ শ্রেণির জমির ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ১৫ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেই হারে উৎসে কর দিতে হবে। ‘খ’ শ্রেণির জন্য ৮ শতাংশ বা ৬ লাখ টাকা, ‘গ’ শ্রেণির জন্য মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ১৫ লাখ টাকা, ‘ঘ’ শ্রেণির জন্য মূল্যের ৮ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ৬ লাখ টাকা এবং ‘ঙ’ শ্রেণির জন্য ৮ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ৫ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেই হারে উৎসে আয়কর দিতে হবে।
বর্তমানে ঢাকার গুলশান, বনানী, মতিঝিল, দিলকুশা, নর্থ সাউথ রোড, মতিঝিলের সম্প্রসারিত এলাকা এবং মহাখালী এলাকার বাণিজ্যিক জমির ক্ষেত্রে ৮ শতাংশ বা ২০ লাখ টাকার অধিক যেটি বেশি সেই হারে উৎসে কর ধার্য রয়েছে। আবাসিক জমির বেলায় ১০ লাখ টাকা কর দিতে হবে। নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বাণিজ্যিকে ১৫ লাখ এবং আবাসিকের ক্ষেত্রে ৬ লাখ টাকা উৎসে কর দিতে হবে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন পদ্ধতিতে জমির ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই উপকৃত হবেন। আগের সব ধরনের জমির রেজিস্ট্রেশনে একই হারে কর ছিল। এখন কর কমানোর পাশাপাশি মৌজাভিত্তিক ও জমির শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। এতে আবাসিক জমি কেনাবেচার খরচ কমবে।
ঢাকার ধানমন্ডি, ওয়ারী, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা, শাহবাগ. রমনা, পল্টন, বংশাল, নিউমার্কেট ও কলাবাগান থানার অন্তর্গত মৌজার ‘ক’ শ্রেণির জমির ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ১০ লাখ টাকা, ‘খ’ শ্রেণির জন্য ৮ শতাংশ বা ৪ লাখ টাকা, ‘গ’ শ্রেণির জন্য মূল্যের ৮ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ১০ লাখ টাকা, ‘ঘ’ শ্রেণির জন্য মূল্যের ৮ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ৪ লাখ টাকা এবং ‘ঙ’ শ্রেণির জন্য ৮ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ৩ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেই হারে উৎসে আয়কর দিতে হবে।
খিলক্ষেত, কাফরুল, মোহাম্মদপুর, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা মডেল থানা, ক্যান্টনমেন্ট থানা, চকবাজার থানা, কোতোয়ালি থানা, লালবাগ থানা, খিলগাঁও, শ্যামপুর, গেন্ডারিয়া থানার সব মৌজার ‘ক’ শ্রেণির জমির ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ৫ লাখ টাকা, ‘খ’ শ্রেণির জন্য ৮ শতাংশ বা ২ লাখ টাকা, ‘গ’ শ্রেণির জন্য মূল্যের ৮ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ৫ লাখ টাকা, ‘ঘ’ শ্রেণির জন্য মূল্যের ৮ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ২ লাখ টাকা এবং ‘ঙ’ শ্রেণির জন্য ৮ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি দেড় লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেই হারে উৎসে আয়কর দিতে হবে।
ঢাকা উত্তর-পশ্চিম বিমানবন্দর, মুগদা, রূপনগর, ভাষানটেক, বাড্ডা থানা, পল্লবী থানা, ভাটারা, শাহজাহানপুর, মিরপুর মডেল থানা, দারুস সালাম, দক্ষিণখান, উত্তরখান, তুরাগ, শাহ আলী, সবুজবাগ, কদমতলী, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, ডেমরা ও আদাবর থানা, গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও কালীগঞ্জ থানার সব মৌজা, নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর, রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁ থানার সব মৌজার ‘ক’ শ্রেণির জমির ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ৪ লাখ টাকা, ‘খ’ শ্রেণির জন্য ৮ শতাংশ বা দেড় লাখ টাকা, ‘গ’ শ্রেণির জন্য মূল্যের ৮ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ৪ লাখ টাকা, ‘ঘ’ শ্রেণির জন্য মূল্যের ৮ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি দেড় লাখ টাকা এবং ‘ঙ’ শ্রেণির জন্য ৮ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি এক লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেই হারে উৎসে আয়কর দিতে হবে।
চট্টগ্রাম জেলার খুলশী, পাঁচলাইশ, পাহাড়তলী, হালিশহর ও কোতোয়ালি থানার সব মৌজা, নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর থানার সব মৌজা, গাজীপুর জেলার সদর, বাসন, কোনাবাড়ি, গাছা, টঙ্গী পূর্ব, টঙ্গী পশ্চিম থানার সব মৌজার ‘ক’ শ্রেণির জমির ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের ৬ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ৩ লাখ টাকা, ‘খ’ শ্রেণির জন্য ৬ শতাংশ বা এক লাখ টাকা, ‘গ’ শ্রেণির জন্য মূল্যের ৬ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ৩ লাখ টাকা, ‘ঘ’ শ্রেণির জন্য মূল্যের ৬ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি এক লাখ টাকা এবং ‘ঙ’ শ্রেণির জন্য ৬ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ৮০ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেই হারে উৎসে আয়কর দিতে হবে।
ঢাকা জেলার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার, ধামরাই উপজেলার সব মৌজা, চট্টগ্রামের আকবর শাহ, ইপিজেড, কর্ণফুলী, চকবাজার, চান্দগাঁও, ডবলমুরিং, পতেঙ্গা, পাঁচলাইশ, বন্দর, বাকলিয়া, বায়েজিদ বোস্তামি ও সদরঘাট থানার সব মৌজা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার সব মৌজার ‘ক’ শ্রেণির জমির ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের ৬ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ২ লাখ টাকা, ‘খ’ শ্রেণির জন্য ৬ শতাংশ বা ৮০ হাজার টাকা, ‘গ’ শ্রেণির জন্য মূল্যের ৬ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ২ লাখ টাকা, ‘ঘ’ শ্রেণির জন্য মূল্যের ৬ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ৮০ হাজার টাকা এবং ‘ঙ’ শ্রেণির জন্য ৬ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ৫০ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেই হারে উৎসে আয়কর দিতে হবে।
এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন ব্যতীত অন্য সিটি করপোরেশন এলাকা ও অন্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং জেলা সদরে অবস্থিত সব পৌরসভার অন্তর্গত সব মৌজার ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের ৬ শতাংশ, জেলা শহরের বাইরের পৌরসভার ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ এবং পৌরসভা ব্যতীত অন্য সব মৌজার জন্য ২ শতাংশ উৎসে কর ধার্য করা হয়েছে।