সবারবেলায় সত্য বলি

জার্মানিতে ২ লাখ কর্মীর চাহিদা: অভিবাসীদের সুবর্ণ সুযোগ

জার্মান সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে ২ লাখ দক্ষ কর্মী ভিসা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। জনসংখ্যার বৃদ্ধির ধীরগতি এবং অভিজ্ঞ কর্মীদের ঘাটতি পূরণে দেশটি বিদেশি কর্মী এবং শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজার বলেছেন, ‘নতুন নিয়মের আওতায় অভিবাসনপ্রত্যাশী পেশাজীবী এবং তরুণ শিক্ষার্থীরা সহজে জার্মানিতে কাজ ও পড়াশোনার সুযোগ পাবেন।’

ভিসা প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন

জার্মানিতে দক্ষ কর্মীর সংকট মোকাবিলায় ভিসা প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হয়েছে। ২০২৩ সালে দেশটি ১ লাখ ৭৭ হাজার পেশাদার ভিসা ইস্যু করেছিল। চলতি বছর এই সংখ্যা ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশটির শ্রমবাজারে বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখ ৪০ হাজার চাকরির পদ খালি রয়েছে। কর্মসংস্থানের এই শূন্যতা অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস করছে।

জার্মানি শুধু তাৎক্ষণিক সংকট মোকাবিলায় নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে জনবল সরবরাহ নিশ্চিত করতে ভিসা নীতি আরও উদার করার পরিকল্পনা করেছে। এর অংশ হিসেবে বিদেশি কর্মী আকর্ষণে ‘অপরচুনিটি কার্ড’ চালু করা হয়েছে।

অপরচুনিটি কার্ড

নতুন অপরচুনিটি কার্ড পয়েন্ট-ভিত্তিক একটি সিস্টেম। আবেদনকারীদের ভাষাগত দক্ষতা, পেশাগত অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং বয়সের ওপর ভিত্তি করে পয়েন্ট দেওয়া হবে। যারা এই কার্ডের জন্য যোগ্য হবেন, তারা জার্মানিতে এসে চাকরি খুঁজতে পারবেন এবং উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদ্ধতি শুধুমাত্র উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন পেশাজীবীদের জন্য নয়, বরং তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্যও কার্যকর। এটি তাদের ক্যারিয়ার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিদেশি কর্মীদের অবদান

গত পাঁচ বছরে জার্মানিতে ১৬ লাখ নতুন চাকরি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ৮৯ শতাংশ পদ বিদেশি কর্মীদের দ্বারা পূরণ হয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলোর নাগরিকরা এই চাকরিগুলোতে বড় ভূমিকা রেখেছেন। এতে স্পষ্ট যে অভিবাসন জার্মানির অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

জার্মানি কেবল দক্ষ পেশাজীবীদের নয়, শিক্ষার্থীদের জন্যও ভিসা নীতি উদার করেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে শিক্ষার্থী ভিসার সংখ্যা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে এই সংখ্যা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

কর্মক্ষেত্র ও অর্থনীতিতে সম্ভাবনা

বিশ্বব্যাপী দক্ষ কর্মীর ঘাটতি মোকাবিলায় জার্মানি একটি উদাহরণ তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র বিদেশি কর্মী ও শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে না, বরং জার্মানির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। দেশটি দক্ষ কর্মী এবং শিক্ষার্থী আকর্ষণের মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং কর্মক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম হবে।

জার্মানির জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ ৫০ বছরের বেশি বয়সী। ফলে ভবিষ্যতে কর্মক্ষম জনসংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, অভিবাসী কর্মীরা দেশটির উৎপাদনশীলতা এবং সামাজিক কল্যাণ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নতুন দিগন্ত উন্মোচন

জার্মান সরকারের এই উদ্যোগ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। এটি শুধু জার্মানির কর্মক্ষেত্র নয়, বরং বিশ্বব্যাপী পেশাদার কর্মী এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠবে। ইউরোপের অভিবাসন নীতির একটি মডেল হিসেবেও এই পরিকল্পনা কার্যকর হতে পারে।

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জার্মানির এই উদ্যোগ সময়োপযোগী এবং প্রভাবশালী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এটি শুধু অভিবাসীদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না, বরং জার্মানির অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে আরও বেগবান করবে।

উল্লেখ্য, জার্মান ফেডারেল স্ট্যাটিস্টিকাল অফিসের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে প্রায় ২২ হাজার বাংলাদেশি জার্মানিতে বাস করছেন। তবে জার্মানির শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রায় ১২ হাজার বাংলাদেশি কর্মী বিমার আওতায় আছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩০ শতাংশ প্রবাসী কাজ করেন হসপিটালিটি খাতে। বাকিরা বাণিজ্য, প্রকৌশল এবং তথ্য ও যোগাযোগ খাতে কর্মরত।

বাংলাদেশি যারা পেশাগত বা ব্যক্তিগত কারণে স্থায়ীভাবে জার্মানিতে অভিবাসন করতে চান, তাদেরকে দৈনন্দিন জীবন ও কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত করতে সহায়তা করে প্রকল্পটি।

এসআই/আজকের বেলা
আজকের বেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

Get real time updates directly on you device, subscribe now.