জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “পুরনো সংবিধান এবং পুরনো শাসন কাঠামো রেখে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। কেবলমাত্র সরকার পরিবর্তন করেই কিন্তু আমাদের জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত সম্ভব নয়, প্রকৃত গণতন্ত্র বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহিদদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ অর্পনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল, যারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, গত ১৫ বছরে নানাভাবে জুলুম করেছে তাদের বিচার এ বাংলার মাটিতে হতে হবে।”
তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে, দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিচার বাংলাদেশের মানুষ দেখতে চায়। বিচারের পরে যে সংস্কার কার্যক্রম, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন রয়েছে, দ্রুত জাতীয় সংলাপে গিয়ে আমাদের জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র তার বাস্তবায়ন দেখতে চাই।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেলেও ফ্যাসিবাদের কারণে সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বারবার দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। আমাদের এবার যাতে আর দীর্ঘায়িত না হয়, ২৪-এর গণ অভ্যুত্থান যাতে ব্যর্থ না হয়। পুরনো সংবিধান এবং পুরনো শাসন কাঠামো রেখে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। কেবলমাত্র সরকার পরিবর্তন করেই কিন্তু আমাদের জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত সম্ভব নয়। প্রকৃত গণতন্ত্র বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বলেছি, ২৪ সালে যেহেতু গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে, আমরা কেবল সরকার পরিবর্তন নয়, শাসন কাঠামোসহ পুরো সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন করে নতুন একটি বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করতে চাই। যেখানে প্রকৃত গণতন্ত্র, ইনসাফ এবং সাম্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”
এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, “জাতীয় যে তারুণ্যের হাত ধরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যে কার্যক্রম শুরু করেছে, যেন বাংলাদেশের সব সম্প্রদায়ের মানুষকে সব ঘরানার মানুষকে সবার জন্য একটা আস্থাভাজন রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করতে পারি।”
তিনি আরও বলেন, “ডান বামের বাইনারি বিভাজনের মধ্যে না গিয়ে সত্যিকার অর্থে একটি মধ্যমপন্থী রাজনৈতিক উদ্যেশ্যে আমরা সফল হতে পারি, সে অঙ্গীকার আমাদের রয়েছে। সেই অঙ্গীকারগুলো যেন আমরা বাস্তবে রুপ দিতে পারি, সেজন্য সারা দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সমর্থন আমরা প্রত্যাশা করি।”
আখতার হোসেন বলেন, “আমরা প্রত্যাশা করি, সারাদেশের অনেক মানুষ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাচ্ছেন, অল্প সময়ের মধ্যে সারাদেশের সকল জেলায় সব উপজেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি তার কর্মপরিধি ও বিস্তৃতি লাভে সমর্থ হবে বলে আমরা আশাবাদী। এই সময়ে রায়েরবাজারে আমাদের আরেকটা কর্মসূচি রয়েছে। আমাদের যারা ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে শহিদ রয়েছেন, আমরা তাদের কবর জিয়ারতে যাব। তাদের জন্য দোয়া করবো।”
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটওয়ারি, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, মেহেরাব সিফাতসহ নেতাকর্মীরা।
এর আগে সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ২টি দ্বিতল বাসসহ কয়েকটি গাড়ি করে স্মৃতিসৌধে উপস্থিত হন নাগরিক পার্টির আহবায়ক কমিটির সদস্যরা। দ্বিতল বাস থেকে একে একে নামেন নাহিদ, হাসনাত, সারজিসসহ অন্যান্যরা। এসময় দলটির স্থানীয় সমর্থক, নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী কমিটির শতাধিক সদস্যরা তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
সকাল ৮টায় শহিদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তারা, “দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা”, ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতাসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে তারা বীর শহিদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করেন। পরে গনমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।