২০২৪ সালের ১ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, মাস শেষে তা পরিণত হয় স্বৈরাচার সরকার উৎখাতের ইতিহাসে। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন মাত্র ৩৬ দিনেই তার গতিপথ পালটে সরকার পতনের আবহ তৈরি করে। ঘটনাক্রমে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হন টানা সাড়ে ১৫ বছর সরকার প্রধানে থাকা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে ১ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে রাস্তায় নেমে আসে হাজারো শিক্ষার্থী। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পেনশনবিষয়ক আন্দোলনে বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম। তবুও ঈদের ছুটির পর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরে তা দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত এ প্লাটফর্মের নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির একদল সংগ্রামী শিক্ষার্থী। তারা হলেন- সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম, বর্তমান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া, জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের, জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা আব্দুল হান্নান মাসউদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদসহ অনেকেই। প্ল্যাটফর্ম ঘোষণার দু’দিন পরেই ৬৫ সদস্য বিশিষ্ট সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
জুলাইয়ের প্রথমদিকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১ জুলাই চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে এদিন চার দফা দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি দেয়।
দাবিগুলো ছিল—
১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে।
২. ১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।
৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে।
৪. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ৯ দফার ঘোষক বর্তমানে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতবছর জুলাইয়ে বাংলাদেশের মানুষ ছাত্র-জনতার সঙ্গে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে মুক্তি পেয়েছে। সেই জুলাই স্মরণে আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোতে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করব। সেখানে জুলাই আগস্টের শহিদ ও আহতদের নিয়ে আলোচনা হবে এবং তাদের জন্য দোয়া হবে। সেখানে তাদের অবদান তুলে ধরা হবে।’