রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ফায়ার সার্ভিস বা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ এমন কোনো নোটিশ ব্যবসায়ীরা পাননি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমান টিপু।
তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডে মার্কেটের ৪০০ দোকানের মধ্যে প্রায় তিনশর অধিক দোকান পুড়ে গেছে। এতে ব্যবসায়ীদের অন্তত ৩০০-৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেটের সামনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আরিফুর রহমান টিপু বলেন, সিটি করপোরেশনের যে মার্কেটগুলোতে এখন পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে—সবগুলো ঘটনাই ঘটে ভোরে। যখন বৈদ্যুতিক ইউনিট ব্যবহার জিরোতে থাকে। এমন সময় আগুন লাগার ঘটনা অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিৎ।
ফায়ার সার্ভিস ও ডিএনসিসির ঝুঁকিপূর্ণ নোটিশ প্রসঙ্গে দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, কৃষি মার্কেট যে ঝুঁকিপূর্ণ সে ধরনের নির্দেশনা বা কাগজপত্র আমরা দোকান ব্যবসায়ীরা পাইনি।
তিনি বলেন, এখানে টিনশেড মার্কেট ভেঙে বহুতল ভবন করার কথা বলেছে সিটি করপোরেশন। আমরা শুধু বলেছি যার যে দোকান সে যেন সেটি বরাদ্দ পায়। বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সময়ও আমরা এই কথাই বলেছি। বাইরে থেকে কোনও লোকজন এসে যেন বরাদ্দ না পায়।
তিনি বলেন, আগুন পুরোপুরি নেভার পর আমরা দোকান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করবো, কার কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা তাদের ক্ষতিপূরণ কিভাবে নিতে পারেন, সরকার কিভাবে পাশে দাঁড়াবে—এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
তিনি আরও বলেন, যার দোকান তিনি কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হননি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দোকান ব্যবসায়ী। যিনি দোকানে সাটার খোলেন তিনিই আসল ক্ষতিগ্রস্ত। টিনশেড এই মার্কেট ভেঙে বহুতল ভবন করা হলে দোকানের বরাদ্দ যেন দোকান মালিকরা পান। কিন্তু আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা যেন ক্ষতিপূরণটা পান।
বাংলাদেশ দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান মাহমুদ বলেন, কৃষি মার্কেট যে ঝুঁকিপূর্ণ এ ধরনের কোনও নোটিশ আমরা পাইনি। আমরাও আশঙ্কা করিনি যে মার্কেটটা ঝুঁকিপূর্ণ। ফায়ার সার্ভিস যে সচেতনতামূলক কর্মসূচি করেছে সেগুলোতে কিন্তু আমরা অংশগ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন এই মার্কেট যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয় তাহলে আগে বন্ধ করা হলো না কেন? আগুন লাগলে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ পায় দোকান মালিক! কেন? আগুন লাগলে ক্ষতি তো হয় দোকান ব্যবসায়ীর।
তিনি আরও বলেন, যারা দোকানের মালিক তারা তো ভাড়া দিচ্ছেন ব্যবসায়ীদের কাছে। তারা ভাড়া নিচ্ছেন, কিন্তু আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দোকান ব্যবসায়ীরা। আমি ব্যবসায়ী ভাড়া দিচ্ছি, সিটি কর্পোরেশন ভাড়া নিচ্ছে, তাহলে আগুনে আমার অপরাধটা কোথায়? আমার ক্ষতিপূরণ কে দেবে? আগুন লাগার পর কেন বলা হচ্ছে এটা ঝুঁকিপূর্ণ? আমিতো ব্যবসায়ী আমার অপরাধটা কোথায়? এটা যদি ঝুঁকিপূর্ণই হবে তাহলে আগে কেন বন্ধ করেননি? ঢাকা শহরে যতগুলো ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট আছে সরকার সেগুলো বন্ধ করে দিক। আমি ব্যবসায়ী আগুনে সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়ার পর কেন শুনতে হবে এটা ঝুঁকিপূর্ণ। আমি ব্যবসায়ী হিসেবে দাবি করবো ক্ষতিপূরণটা ব্যবসায়ীকে দেওয়া হোক, দোকান মালিকদের নয়।
এদিন সকালে অগ্নিকাণ্ডস্থলে সাংবাদিকদের ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম বলেন, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে কোনো ফায়ার সেফটি ও প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৪টার দিকে মার্কেটের ডানদিকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানা গেছে। শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করলেও পরে একে একে ১৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
মার্কেটটিতে ৫শর বেশি দোকান ছিল। এসব দোকানে কাজ করে ২ হাজারের বেশি মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন। এ মার্কেটে সবজি দোকানের পাশাপাশি জুতার দোকান, স্বর্ণের দোকানসহ অনেক ধরনের দোকান রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুড়ে যাওয়া দোকানগুলোতে কোটি কোটি টাকার মালামাল ছিল।