সবারবেলায় সত্য বলি

মাহমুদউল্লাহর লড়াই, বাকিদের অসহায় আত্মসমপর্ণ!

প্রথমে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ৩৮৩ রান করেছে, তখনই ম্যাচটি একপ্রকার বাংলাদেশের হাতের বাইরে চলে গেছে। এই রান তাড়া করে জিততে হলে বাংলাদেশের ব্যাটারদের অসম্ভবকেই সম্ভব করতে হতো। সেটি আর পারল না লিটন-সাকিবরা।

তবে এক মাহমুদউল্লাহ লড়াই করলেন। বাকি সবার অসহায় আত্মসমপর্ণ পরও নিজে শতক হাঁকালেন। অন্য প্রান্তের ব্যাটারদের বড় ব্যর্থতার কারণে বিশ্বকাপে টানা চতুর্থ হার। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১৪৯ রানের হারে সেমিফাইনালের অসম্ভব স্বপ্নও কার্যত শেষ হয়ে গেল।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৮২ রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৭৪ রান করেছেন ডি কক। বাংলাদেশের হয়ে ২ উইকেট শিকার করেন হাসান মাহমুদ।

জবাবে খেলতে নেমে ৪৬ ওভার ৪ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৩৩ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ ১১১ রান এসেছে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে। এই হারে বাংলাদেশ পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে নেমে গেল।

৩৮৩ রানের বড় লক্ষ্য তাড়ায় দেখে-শুনে শুরু করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ তামিম। প্রথম পাঁচ ওভারে সাবধানী শুরুর পর আসে প্রোটিয়া আঘাত।

শুরুটা আগের ম্যাচে ফিফটি করা ওপেনার তানজিদ তামিমকে দিয়ে। আবারও বাজে বলে আউট হলেন তামিম। সপ্তম ওভারের প্রথম বলটি লেগ স্টাম্পের বাইরে করেছিলেন জানসেন। খাটো লেন্থের সেই বলে বাউন্ডারি না পাওয়াটাই যেখানে অবাক করা ব্যাপার, সেখানে নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসলেন তামিম। হাফ পুল, হাফ হুকের মতো শট খেলতে গিয়ে তার গ্লাভসে লেগে বল জমা পড়ে উইকেটকিপারের গ্লাভসে।

এর পরের বলেই ফিরেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আসর জুড়েই নিজেকে হারিয়ে খোঁজা এই ব্যাটার জানসেনের খাটো লেন্থের বলের সমাধান খোঁজে পাননি!

চারে নেমে ব্যর্থ হলেন সাকিব আল হাসান। আগের ওভারে জোড়া উইকেট হারানোর পর এবার অধিনায়ককেও হারালো বাংলাদেশ। লিজার্ড উইলিয়ামসের লেন্থ বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে এই ব্যাটারও ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। ফলে ৩১ রান তুলতেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারিয়ে ধুঁকছে টাইগাররা।

এই আসরে টাইগারদের ভরসার প্রতীক মুশফিকুর রহিমও কিছু করতে পারলেন না। লিটনের সাথে ইনিংস গড়ার চেষ্টা করার চেয়ে শর্ট বলে ছয় মারার ইচ্ছা হলো এই উইকেটকিপার ব্যাটারের। সরাসরি ক্যাচ গেল ডিপ থার্ডে। জেরাল্ড কোয়েৎজির উদ্যাপন অবশ্য হয়েছে দেখার মতোই। ৫০ এর আগেই চার উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় চলে যায় বাংলাদেশ।

অভিজ্ঞ এই ব্যাটার ফেরার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি লিটনও। কাগিসো রাবাদার বলে লেগ বিফোর হয়ে ফেরেন ২২ রান করা এই ওপেনার। উইকেটে থিতু হলেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। কেশভ মহারাজের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন ১১ রান করা এই ব্যাটার।

৮১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশের হয়ে একাই লড়াই চালান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সপ্তম উইকেট জুটিতে নাসুম আহমেদকে সঙ্গী করে ৪১ রানের জুটি গড়েন রিয়াদ। তিন চারে ১৯ বলে ১৯ রান করে নাসুম আউট হলে ভাঙে এই জুটি। তবে ৮ম উইকেটে হাসান মাহমুদকে সঙ্গী করে ফের লড়াই চালান বাংলাদেশের এই ‘সাইলেন্ট কিলার’। ৬৭ বলে তুলে নেন চলতি আসরের প্রথম ফিফটি।

নবম উইকেট জুটিতে মোস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪র্থ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মাহমুদউল্লাহ। রাবাদার বলে এক রান নিয়ে ১০৪ বলে ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলেন তিনি। শতকের পর অবশ্য বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তিনি। ১১১ বলে ১১১ রান করে কোয়েৎজির বলে লং অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরার পথে দক্ষিণ আফ্রিকানদের অভিনন্দনও পেয়েছেন। একা হাতে লড়াই যেটিকে বলে, আজ সেটিই করেছেন আজ এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। তিনি ফেরার পর দক্ষিণ আফ্রিকার এই ম্যাচ শেষ করতে লেগেছে ৬ বল। শেষ ব্যাটার হিসেবে ১১ রানে ফেরেন মুস্তাফিজুর।

এর আগে টস জিতে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর রীতিমতো অত্যাচার করে রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩৬ রানে দুই উইকেট হারানোর পর কুইন্টন ডি কক এবং এইডেন মার্করামের জুটিতে দ্রুত ম্যাচে ফেরে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৩১ রানের জুটি গড়েন এইডেন মার্করাম এবং ডি কক। ৬০ রান করা মার্করামকে লং অফে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান সাকিব।

জুটি ভেঙে অবশ্য আরও বড় বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। পাঁচে নেমে ক্লাসেন রীতিমতো টর্নেডো ব্যাটিং করেন। সেঞ্চুরির পর ডি ককও বাড়ান রানের গতি। ১৩২ রানের বিধ্বংসী জুটিতে তারা বল খেলেছেন মোটে ৮৭টি। ১৫ চার এবং ৭ ছয়ে ১৪০ বলে ১৭৪ রান করেছেন ডি কক। ৮ ছক্কা ও ২ চারে ৪৯ বলে ৯০ রানের দানবীয় ইনিংস খেলে আউট হয়েছেন ক্লাসেন।

ডাবল হান্ড্রেড করার সম্ভাবনা তৈরি করে শেষমেশ ১৭৪ রানে ফেরেন ডি কক। ক্লাসেনেরও সুযোগ ছিল সেঞ্চুরির। তবে দুজনকেই আউট করেছেন হাসান মাহমুদ। তবে ততোক্ষণে রানের পাহাড় গড়ে ফেলেছে আফ্রিকান দলটি। শেষদিকে ১৫ বলে মিলারের ৩৪ রানের ক্যামিওতে ৩৮২ রানে থামে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।

এসআই/আজকের বেলা
আজকের বেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

Get real time updates directly on you device, subscribe now.