সবারবেলায় সত্য বলি

রাউজানে জাহাঙ্গীর হত্যায় জড়িত ২ যুবদলকর্মী গ্রেপ্তার

রাউজানে ব্যবসায়ী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, তারা দুজনেই যুবদলের কর্মী। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি করে রামদা, দেশিয় এলজি ও বিদেশি রিভলবার, ৫ রাউন্ড গুলি ও ২ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) নগরের দুই নম্বর গেট এলাকায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সংম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু। এর আগে ৪ মার্চ দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বাগোয়ান ইউনিয়নের গরিবউল্লাহপাড়ার একটি বাড়ি থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন— আরাফাত মামুন (৪৮) ও বিপ্লব বড়ুয়া (৩৫)। আরাফাত মামুন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী। আর বিপ্লব বড়ুয়া আরাফাতের সহযোগী। সক্রিয় রাজনীতি করলেও তাদের কোনো পদ-পদবী নেই।

পুলিশ সুপার বলেন, ‘গত ২৪ জানুয়ারি রাউজান থানার নোয়াপাড়া এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর আলমকে জুমার নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা গুলি করে খুন করেন। ওই ঘটনায় তার মামাতো ভাই মো. আব্বাস উদ্দিন আহত হন। ঘটনার পরপরই রাউজান থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভি ফুটেজ ও আলামত সংগ্রহ করে। ভিকটিমের ছেলে মাকসুদ আলমের এজাহারের ভিত্তিতে অজ্ঞাতনামা ২৫ থেকে ৩০ জনের নামে রাউজান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরে হয়।’

সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ অত্যন্ত আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সাথে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারের জন্য নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে। এরইমধ্যে রমজান আলী ও গিয়াস উদ্দীন নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়।’

‘অবস্থান শনাক্ত করে গত মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দিবাগত রাত ২টার দিকে এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাফাতকে গ্রেপ্তারে রাউজান থানার পাহাড়তলী বাজার এলাকায় অভিযান চালানো হয়। আরফাত তার মামার বাসায় ছিল। গ্রেপ্তার করতে ওই বাড়ি ঘেরাও করলে আরাফাত এবং তার সহযোগী বিপ্লব বড়ুয়া গুলি ছুড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে তাদের আমরা ধরতে সক্ষম হই এবং তাদের কাছ থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করা হয়’ —যোগ করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, গ্রেপ্তার আরাফাতের বিরুদ্ধে রাউজান থানায় দ্রুত বিচার আইনে একটি, মারামারির ২টি, অপহরণ ও চাঁদাবাজির ২টি এবং খুনের একটি মামলা রয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নগরের চকবাজার থানায় একটি খুনের এবং চান্দগাঁও থানায় একটি চেক প্রত্যাখ্যানসহ মোট ৮টি মামলা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘গ্রেপ্তার দুজন জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, তাদের কাছে থাকা অস্ত্র-গুলির কোন বৈধ লাইসেন্স নেই। তারা ওই অস্ত্র ও গুলি দিয়ে অপহরণ, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করে।’

গত ২৪ জানুয়ারি জুমার নামাজ পড়তে শহরের চান্দগাঁওয়ের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি নোয়াপাড়ায় যান জাহাঙ্গীর আলম। ওইদিনই ১৭ দিন ব্যবসার কাজে মিয়ানমার ও মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে দেশে ফিরেছিলেন। মোটরসাইকেলে করে মসজিদে যাওয়ার পথে বাড়ির অদূরে আসাদ আলী মাতব্বর পাড়া জামে মসজিদের কিছু আগে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তার পথ আটকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। পরে মসজিদের মুসল্লিরা বের হলে তাদের লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। পরে এলাকার লোকজন তাদের উদ্ধার করে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলমকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় আব্বাস উদ্দিন নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন।

জাহাঙ্গীর আলম নগরের আসাদগঞ্জে পাইকারি শুঁটকি ব্যবসায়ী। এছাড়াও তাঁর নোয়াপাড়া পথেরহাট এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.